বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওমিক্রন: শনাক্তের হার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

  •    
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:৫৩

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও থাকবে। এ সময় চূড়ায় উঠবে সংক্রমণ। নমুনা পরীক্ষা বাড়লে সংক্রমণের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়াবে। শনাক্তের হার ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালগুলোয় চাপ বাড়বে।

প্রথম শনাক্তের দেড় মাসের মধ্যে দেশে এখন ৮৫ শতাংশ নমুনায় ওমিক্রনের অস্তিত্ব মিলছে। এর প্রভাবে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দিনে ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে, যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের রেকর্ডের কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের, যা গত ৫ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও থাকবে। এ সময় চূড়ায় উঠবে সংক্রমণ। নমুনা পরীক্ষা বাড়লে সংক্রমণের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়াবে। শনাক্তের হার ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালগুলোয় চাপ বাড়বে। চিকিৎসকরা যে হারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ডেল্টার স্থান দখল করেছে ওমিক্রন। এ ভাইরাসটি প্রভাব পাঁচ-ছয় সপ্তাহ থাকার কথা। সেই হিসাবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চূড়ায় উঠবে সংক্রমণ। তবে প্রকৃত করোনা শনাক্তের সংখ্যা জানতে হলেও বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়াতে হবে নমুনা পরীক্ষা।

অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা খরচ বেশি এবং ওমিক্রনের উপসর্গ মৃদু হওয়ায় করোনা পরীক্ষা করাতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। তাই করোনা সংক্রমণ বেশি এমন এলাকায় মোবাইল ল্যাবের মাধ্যমে বিনা মূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু ঘটলেও বছর গড়িয়ে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা চূড়ায় উঠেছিল। গত বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা কমতে কমতে গত ডিসেম্বরে মৃত্যুহীন দিনও দেখেছিল দেশ। তবে অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর এটির সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। এতদিন মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখে অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা দেখা গেলেও বিশেষজ্ঞরা বরাবরই সতর্ক করে আসছেন।

ওমিক্রন ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৯ নভেম্বর ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ৪ জানুয়ারি নতুন করে একই নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনা না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাস্তবে এই নির্দেশনার প্রভাব চোখে পড়েনি। তবে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ২১ জানুয়ারি দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে অফিস-আদালত অর্ধেক জনবল দিয়ে চালানোর প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার, তবে সেটিও বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপর। গত রোববার পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরদিন সোমবার শনাক্ত হয় ৩২ দশমিক ৩৭, মঙ্গলবার ৩২ দশমিক ৪০, বুধবার ৩১ দশমিক ৬৪ ও বৃহস্পতিবার ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সর্বশেষ শুক্রবার পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশে করোনা শনাক্ত হারে এটিই ছিল এ-যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে, যে কারণে করোনা শনাক্ত কম হচ্ছে। মাত্র ৪০ হাজার পরীক্ষা করে একটি দেশে করোনার সার্বিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। ওমিক্রনের যেহেতু সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বর্তমান নমুনা পরীক্ষা আরও তিন গুণ বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া যাদের উপসর্গ রয়েছে, তাদের নমুনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হতে হবে। যারা করোনা লক্ষণযুক্ত আছেন, তাদের বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।

‘একটি মাইক্রোবাসে ল্যাব নিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে, যেটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সময় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি আরও দুই সপ্তাহ বাড়তে থাকবে। নমুনা পরীক্ষা কম হলে শনাক্ত কম হবে। কিন্তু শনাক্তের হার অনেক বাড়বে। এটা ৪০-৪৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। তবে নমুনা পরীক্ষা বাড়লে শনাক্তের সংখ্যা দৈনিক ৪০-৫০ হাজার ছাড়াবে। শনাক্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। সংক্রমণ চূড়ায় উঠলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, জানুয়ারিতে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের যে সংখ্যা এসেছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও দুই থেকে তিন গুণ। অসংখ্য লোক আক্রান্ত হচ্ছে। সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। শনাক্তের যে হার দেখা যাচ্ছে তাতে দৈনিক ২২-২৫ হাজার শনাক্ত ছাড়াবে। তবে যদি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা লাখের ঘরে নেয়া যায়, তখন এই সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ হাজারে পৌঁছাবে। ডেল্টার সময় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালেও এবার এখনও ৫০ হাজারের নিচে রয়েছে। যদি নমুনা পরীক্ষা আমরা বাড়াতে পারি, তাহলে শনাক্ত বাড়বে।’

ওমিক্রন নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো সতর্কতা নেই জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সরকার ওমিক্রন প্রতিরোধে বিধিনিষেধ দিয়েছে, বাস্তবায়নে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। সরকার যদি সাত দিনের জন্য দোকানপাট বন্ধ করে দিত, তাহলে জনগণের মধ্যে আতঙ্কে দেখা দিত। ১৫ হাজারের জায়গায় যদি অর্ধলাখ শনাক্ত হতো, তাখন উদ্বেগ তৈরি হতো। সরকার দোকানপাট-বাণিজ্য মেলা-বইমেলা কোনো কিছুই বন্ধ করছে না। ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করার জন্য যে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল, সেটা নেয়া হয়নি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহের পরীক্ষার পরিমাণ, শনাক্তের সংখ্যা দেখে একটি মডেলিং করে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। কিন্তু দেশে এই মডেলিং ঠিকমতো হয় না। আবার জনসাধারণকে জানানোও হয় না। বিশেষজ্ঞরা গত কয়েক দিনে টেস্ট, শনাক্ত, সংক্রমণের ধরন ও বহির্বিশ্বের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কথা বলে থাকেন।’

তিনি বলেন, ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের অনেক পার্থক্য রয়েছে, যেটা সবাই বুঝে গেছে। ধরনটি দ্রুত ছড়ায়, মানুষ সহজে আক্রান্ত হয়, আবার সুস্থও হয়ে যায়। কিন্তু দেশের জনসংখ্যার তুলনায় টেস্ট এখনও অনেক কম হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউেয়ের সময়ের চেয়েও কম হচ্ছে। উপসর্গযুক্ত মানুষও কম আগ্রহী হচ্ছে। মূলত নমুনা পরীক্ষার সুবিধা কম হওয়া এবং হাতের নাগালে না থাকায় অনেকে কষ্ট করতে চান না। আবার সংশ্লিষ্টরা একদিকে বলছেন ধরনটি মৃদু, অন্যদিকে বলছেন টেস্ট কম, ফলে ব্যাপার দুটি সাংঘর্ষিক হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে এত টেস্ট করা সম্ভব নয়। তবে ওমিক্রনে ৭০-৮০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হবে। পরিস্থিতি কয়েক সপ্তাহ এভাবে চলার পর স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ জন্য সবাইকে দ্রুত টিকা দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার টিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দিচ্ছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর