বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
আইসিটি অ্যান্ড ডিজিটাইজেশন অফ ট্রেড বডিজ সংক্রান্ত এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে সরকারের কাছে এ দাবি জানান খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। শনিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘সরকার এ সুবিধা দিলে বাংলাদেশকে রি-ব্র্যান্ডিং করার অবারিত সুযোগ তৈরি হবে। এতে বৈশ্বিক উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের সক্ষমতাকে ভিন্নভাবে জানতে পারবেন এবং এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।’
দেশের আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করারও প্রস্তাব দেন তিনি। কমিটির চেয়ারম্যান মো. শাহিদ-উল-মুনীর জানান, এরই মধ্যে দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে বিডাকে অনুরোধ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এ-সংক্রান্ত সার্কুলারে শুধু রপ্তানিকারকদের জন্য বিদেশে বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হয়েছে।
এ শর্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদ্যমান শর্তটি বাতিল না হলে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও নতুন উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হবেন।’বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে ডিজিটাল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাজস্ব বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাইজেশন জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সভাপতি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও পণ্যকে ২০২২ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি নীতিসহায়তা আরও বাড়াতে হবে।’
এ সময় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে একটি রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।এর আগে বৈঠকে বক্তারা জানান, বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আইসিটি নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তাবিত নতুন আয়কর আইনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল রাখার দাবি করেন তারা। এ ছাড়া প্রণোদনা থেকে অগ্রিম আয়কর কেটে রাখার বিধান বাতিলেরও দাবি করা হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে স্থানীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে সেবা ক্রয়ের কথা বলা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। দেশে বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সহজলভ্য হলেও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করায় বঞ্চিত হচ্ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
তারা বলেন, আইনটি যথাযথভাবে মানা হলে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং আরও জোরদার করা সম্ভব হবে।
এ সময় কমিটির ডিরেক্টর ইন চার্জ সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্পে অনেক ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ও সেবা দরকার হবে।’
এ ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় বাজার থেকে এসব পণ্য ও সেবা কেনার আহ্বান জানান তিনি।বৈঠকে আয়কর আইন ও আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের খসড়া সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়।সভায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির কো-চেয়ারম্যান শোয়েব আহমেদ মাসুদ, মো. মোতাহার হোসেন খান, মো. নাজমুল করিম বিশ্বাস কাজল ও অন্য সদস্যরা।