আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় এ বছর সারের জন্য ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। অবশ্য এর জন্য সারের দাম বাড়বে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
রাজধানীর এফডিসিতে শনিবার ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারের ভর্তুকিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এবং আগামী জুন পর্যন্ত আরও ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
‘আন্তর্জাতিক বাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার ফলেই এ বিশাল অংকের ভর্তুকি লাগবে। এমনিতে আমাদের প্রতি বছর ৮-৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে লাগে।’
তিনি বলেন, ‘এতো বিশাল অংকের ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে সরকার দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। এতো ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে। কিন্তু কৃষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কৃষকের কল্যাণে ও কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়াবেন না।
‘অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি শ্লথ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারে ভর্তুকি দিয়ে যাবেন।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, চলতি বছরে সারে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে আরও ৯ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ সালে সারে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বর্তমান সরকার সবার জন্য নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। সেজন্য নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। এছাড়া ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের অনেকগুলো ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, আরও অনেকগুলো স্থাপনের উদ্যোগ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপদ ফসলের উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ভালো কৃষি চর্চা মেনে উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে। এটি মেনে ফসল উৎপাদন হলে খাবার যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর হবে, তেমনই রপ্তানি বাড়বে।
‘পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউস ও ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা সক্ষম হবো।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হলে সাধারণ মানুষের আয়ও বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে না পারলে, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে ভেজাল ও অনিরাপদ খাবারের প্রকোপ আরও বাড়বে।
‘মানুষের আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ কৃষিজীবী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যের অর্থকরী ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।’