বিরোধী দল বিএনপি অনেক আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এলেও সে দাবি ছাড়ছে না নতুন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ।
দলটির আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে গণঅধিকার পরিষদ।
দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে দলটি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাজধানীর পল্টনে শনিবার নির্বাচন কমিশন আইন ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এ দাবি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশনে ফেরেশতা দিলেও দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না, যা প্রমাণ হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে।’
২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হয়। তখন বিপুল জয় পায় জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির একাংশের সঙ্গে জোট করা বিএনপি।
বিএনপির শাসনামলের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবে- এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের আন্দোলনের মধ্যে একপর্যায়ে জরুরি আইন জারি হয়।
বিএনপির শাসনামলে প্রধান বিচারপতির চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এই জটিলতা তৈরি হয়।
চাকরির মেয়াদ বাড়ানোয় সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া নিশ্চিত হয়, কিন্তু তাকে মানতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ।
কে এম হাসান বিচারপতি হওয়ার আগে বিএনপির কমিটির সদস্য ছিলেন। আর এ কারণে তাকে মেনে না নিয়ে আন্দোলনে নামে সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।
জরুরি অবস্থা জারির প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে বিএনপি জোটের ভরাডুবি হয়। এরপর উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় বিএনপি জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। পরে তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছেড়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই অংশ নেয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে।
এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইন সংসদে পাস হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন আইন করা হয়। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও রাষ্ট্রপতি এ আইন করার আগে বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। আমাদের দেশে সরকার কোনো ধরনের আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে সংসদে আইন পাস করল, যা সম্পূর্ণ অগণতান্তিক ও আপত্তিকর।’
এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশ বিপদের মুখে। আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে সে ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকুন। এখন শুধু সরকার বিপদে নয় দেশ বিপদে পড়ছে। এই বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য তাদের (সরকার) সকল বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
‘এটা একটা জাতীয় সমস্যা, শুধু আওয়ামী লীগের সমস্যা নয়। আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ঘটবে এটাও সরকার ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝেছে এবং এই সরকারের জন্য এতদিন যারা কাজ করেছে, মানুষকে গুম-খুন করেছে তারা এখন দুশ্চিন্তায় আছে।’
সরকারের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে কি না- এমন প্রশ্নে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘মূল বিষয় হচ্ছে এটা থেকে উত্তরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যাদের নামে এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাদের নামে জারি হবে তাদের খুবই ভারি ভারি ডসিয়ার্ড (তথ্যপঞ্জি) তৈরি হয়েছে। যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়েই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।’
বিষয়টিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে সরকারকে আলোচনার আহ্বান জানান রেজা কিবরিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দলের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
নতুন আইনটিতে সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের সুযোগ না রেখে শুধু সরকারি দলের এবং তাদের নিয়োগ করা কিছু ব্যক্তির মতামতের বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটবে না বলে দাবি করেন নুর।