গাজীপুর মহানগরীতে একটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া তারগাছ এলাকার নাসা গ্রুপের লিজ কমপ্লেক্স কারখানায় শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া জানান, বেতন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয় নিয়ে পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।
গত ২৬ জানুয়ারি কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে কম্পাউন্ডে অবস্থান নেন। এ সময় কারখানার নির্বাহী পরিচালক মোশারফ হোসেন ও নিরাপত্তাপ্রধান শ্রমিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে কারখানায় কাজে যোগ দিতে বলেন।
একপর্যায়ে নির্বাহী পরিচালকের নির্দেশনা না মেনে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরদিন বৃহস্পতিবার কারখানায় কাজে যোগ দিতে এলে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের কোনো নির্দেশনা না পেয়ে বিকেলে শ্রমিকরা ফিরে যান।
পোশাককর্মী রফিক জানান, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে শনিবার কাজে যোগ দিতে এসে কারখানার প্রধান ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পান শ্রমিকরা। এতে তারা শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ গিয়ে তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কারখানায় পরিচালক গাজী মোহাম্মদ জাবেরের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা প্রসঙ্গে এতে বলা হয়েছে, কারখানার শ্রমিকেরা নির্দেশনা অমান্য করে কাজ বন্ধ রেখেছে। আশরাফ নামের এক কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এছাড়াও কারখানার ফ্লোরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করার অভিযোগ আনা হয়েছে এতে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কম্পিউটার, সিসি টিভি, ল্যাপটপ ও সার্ভারসহ কর্মকর্তাদের ১২টি মোবাইল নেই। অফিস থেকে ১৫ লাখ টাকা চুরি হয়েছে। এ সব কারণে ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী আজ থেকে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে ওই প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর আল-আমিন বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছিলাম। কিন্তু মালিকপক্ষ দিচ্ছে না। বরং আমাদের উপর মিথ্যে অপবাদে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
‘হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন পুলিশের কারণে আমরা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না। এখন আমরা চাকরি ছেড়ে কোথায় যাব। আমাদের নতুন চাকরি পেতেও তো সময় লাগবে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কারখানা বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা চালায়।
‘কয়েকজন অতি উৎসাহী হয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশের বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’