নারায়ণগঞ্জে বন্দরের মদনপুরে পুড়ে যাওয়া জাহিন নিটওয়্যার পোশাক কারখানায় ডাম্পিং শেষে তল্লাশি চালিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে পুড়ে যাওয়া ভবনগুলো থেকে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।
নিউজবাংলাকে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন।
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রেণে আসার পর রাত ১০টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ডাম্পিং চলে। সকাল সাড়ে ১০টায় পর্যন্ত চলে তল্লাশি। ভবনগুলোর ভেতরে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। হতাহতের কোনো তথ্য শ্রমিকরাও জানাননি।’
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপরাশেন) জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যদের কমিটি গঠন করা হবে।
ঘটনাস্থলে এদিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কারখানার আশপাশে ভিড় করছেন। প্রিন্টিং ও অন্য একটি ইউনিটে অল্প পরিসরে কাজও শুরু হয়েছে।
কারখানার শ্রমিক মহসীন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ইউনিট আগুনে পড়েনি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমারা সকাল থেকে কাজ শুরু করেছি।’
আরেক শ্রমিক সাহারা বেগম বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ইউনিটগুলোর শ্রমিকরা আপতত পালাবদল করে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন।’
মদনপুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার জাহিন নিটওয়্যারের কারখানায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভায়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘চারটি দোতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে যায়। কারখানার পরিসর বড় হওয়ায় এবং আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের বেগ পেতে হয়।’
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ‘আগুন কীভাবে এক ভবন থেকে রাস্তার ওপর পাশের ভবন গেল তা অনুসন্ধান করে বের করা হবে। আগুনে ৬ নম্বর ভবনের ছাদ ধসে পড়েছে। সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
তিনি জানান, ‘কারখানার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে তৈরি পোশাক, গুদাম ও কাপড় ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতরে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। কারখানার ভেতরে পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।’
প্রত্যাক্ষদর্শী ও কারখানার কর্মচারীরা জানান, কারখানার এক পাশে চারটি ভবন ও রাস্তার অপর পাশে একটি তিনতলা ভবন। যে পাশের এক সারিতে চারটি ভবন তার মধ্যে তিনটি ভবনের আগুন লেগেছে। তবে মাঝখানের এক তলা ভবনটিতে আগুন লাগেনি। অপরপাশের তিনতলা ভবনটি আগুনে পুড়ে গেছে।
কারখানাটির কমার্শিয়াল ম্যানেজার কামরুজ্জামান জানান, ‘এক পাশ থেকে আরেক পাশে কীভাবে আগুন গেলে তা আমরাও বুঝতে পারছি না। দুইপাশের তিনটি ভবন আগুন লেগেছে তবে মাঝখানের এক তলায় আগুন লাগেনি। আবার এ ভবনগুলোর অপর পাশে ১০ থেকে ১২ ফুটের রাস্তা থাকা সত্ত্বেও আরেকটি তিনতলা ভবনে কীভাবে আগুন গেলে তা নিয়ে আমি চিন্তিত।’
নিট কারখানার কোয়ালিটি কন্ট্রলার মো. লাভলু জানান, কারখানাতে শ্রমিক ও স্টাফ মিলিয়ে কয়েক হাজার লোক কাজ করেন। ভবনগুলোতে ফিনিসিং, কাটিংসহ আরও কয়েকটি শাখা ছিল। একটি ভবনে গোডাউন ছিল।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার কারখানা বন্ধ ছিল। তবে কয়েকটি সেকশনে ১০০ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তারা আগুন দেখে দ্রুত বের হন।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কীভাবে আগুন লাগেছিল তা বুঝতে পারছি না। এটা নাশকতা হতে পারে।’
কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
জাহিন নামের এই প্রতিষ্ঠানটির স্পিনিং মিলে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি আগুন লেগেছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছিল কোম্পানিটি।
সেখানে বলা হয়, প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে পুড়েছিল স্পিনিং মিল। তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।