বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাইলেজ জটিলতা: যাত্রা বাতিলে এবার মালবাহী ট্রেন

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩৩

এবার যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে এ তালিকায় যুক্ত হল মালবাহী ও কন্টেইনার ট্রেনও। সর্বশেষ, শুক্রবার রাতে লোকোমাস্টার ও গার্ড সংকটের কারণ দেখিয়ে ঈশ্বরদী লোকোশেড থেকে মালবাহী ৯টি ও চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনারবাহী ৪টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে গত ৩ দিনে সব মিলিয়ে মোট ৩০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হল।

মাইলেজ ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফরা। আন্দোলনে অনড় থাকায় ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করছেন না লোকো মাস্টার, গার্ড, সহকারী লোকো মাস্টার, ট্রেন চেকারসহ অন্যান্য রানিং স্টাফরা। যার প্রভাব পড়েছে ট্রেনের যাত্রায়।

এ অবস্থায় ক্রু সংকটে একের পর এক বাতিল করতে হচ্ছে ট্রেনের যাত্রা। এতে বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে। সোমবার থেকে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু হলে তা জটিল আকার ধারণ করবে। যার প্রভাব পড়তে পারে আন্তঃনগর ট্রেনেও।

ইতোমধ্যে বুধবার থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী ৬টি শাটল ট্রেন, ঢাকার ১০টি, চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামী কমিউটার একটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এবার যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে এ তালিকায় যুক্ত হল মালবাহী ও কন্টেইনার ট্রেনও।

সর্বশেষ, শুক্রবার রাতে লোকোমাস্টার ও গার্ড সংকটের কারণ দেখিয়ে ঈশ্বরদী লোকোশেড থেকে মালবাহী ৯টি ও চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনারবাহী ৪টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে গত ৩ দিনে সব মিলিয়ে মোট ৩০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হল।

রানিং স্টাফরা দাবি আদায়ে অটল থাকায় তৈরি হয়েছে এই স্টাফ সংকট। তিন দিনে ৩০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিলে রেলওয়ে প্রায় অচলবস্থা দেখা দিয়েছ। একই সঙ্গে যাত্রা বাতিলের হিসাবে নতুন নতুন ট্রেন যুক্ত হওয়ায় রেলওয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

মাইলেজ ইস্যুতে প্রজ্ঞাপন বাতিল না করায় ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন হতে মঙ্গলবার থেকেই বিরত রয়েছেন রানিং স্টাফরা। বিশেষ করে লোকোমাস্টারাও এতে যোগ দেয়ায় সব ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রেলওয়ে।

ইতিমধ্যে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে তাদের দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন বাতিল না করা হলে, দেশের সব ট্রেন চালানো থেকে বিরত থাকবেন।

মাইলেজ ইস্যুতে রানিং স্টাফ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো.আনসার আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করছেন না রানিং স্টাফরা। যে কারণে আমরা এলএম ও গার্ড সংকটে চট্টগ্রামের ১১টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। একই কারণে ঢাকা ও ঈশ্বরদীর ১৯টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।’

এতে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়নি বলে জানান তিনি।

তবে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন কোনো ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে বলতে নারাজ। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি কোন সংকট নয়। আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।’

রানিং স্টাফদের যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে তারা আন্তরিক দাবি করে বলেন, ‘নিয়মিত কাজে যোগ দিতে আমরা তাদের অনুরোধ করছি। পাশাপাশি তাদের দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। এর অংশ হিসেবে সোমবার রেলমন্ত্রী আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সাথে একটি মিটিং করবেন। আশা করি সেখান থেকে একটি সমাধানের পথ বের হয়ে আসবে।’

সংকট নিরসনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বুধবার রাতে এক চিঠিতে আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ ও গার্ড প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকের আহ্বান জানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলভবনে রেল সচিবের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নেতারা রাতেই তা প্রত্যাখান করেন। চলমান সমস্যা সমাধান না হলে তারা ফলহীন এমন বৈঠকে বসতে রাজি নন বলে জানান।

বাংলাদেশ রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৪ মাস ধরে মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। তারা বার বার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপনে আমাদের ১৬০ বছরের চলমান সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করেছে, সেটি প্রত্যাহারে কোনো কার্যক্রম দেখিনি।

‘অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি। আমরা সুন্দর সমাধান চাই। আগের নিয়ম বহাল রাখতে হবে। অন্যথায় বেতন-ভাতা না পেলে আমরা কাজ করব না।’

এদিকে মাইলেজ ইস্যুতে প্রজ্ঞাপনের দুটি ধারার মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ধারা মেনে নিয়ে তা পুনর্বহাল করেছে। আরেকটি ধারা যেটিতে রানিং স্টাফদের পেনশনে মাইলেজের জন্য অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ ভাতা পেত, তা এখনো মেনে নেয়নি। আর এটি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের নেতারা।

দাবি আদায়ে প্রতিদিন সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন তারা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এর অংশ হিসেবে বৃস্পতিবার দুপুরে পাহাড়তলী লোকোশেড থেকে ডিআরএম কার্যালয় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন।

নিউজবাংলাকে রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান বলেন, ‘১৬০ বছরের নিয়ম কোন ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়াই অর্থ মন্ত্রণালয় একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাতিল করতে পারে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চাইলে এটি বাতিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারত।

‘কিন্তু শুরু থেকে মনে হচ্ছে, আমাদের দাবি নিয়ে রেল মন্ত্রণালয় অবহেলা করে আসছে। খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। অথচ তারা চাইলেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে বিতর্কিত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করতে পারত। এখন আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম সোমবার মন্ত্রী আমাদের সাথে বৈঠক করতে চান। সেদিন আমাদের কর্মবিরতি শুরু হবে। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে বৈঠকে যাব কীভাবে। এর আগেও তো চাইলে আমাদের সাথে বসতে পারেন।’

সমাধানের কোন আশা দেখছেন কি না-এর জবাবে মুজিবর রহমান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলই সমাধানের একমাত্র পথ। এটা আমাদের পার্ট অব পে। অন্যথায় আগামী নিয়োগ থেকে নতুন নিয়ম চালু করা হোক। আর বর্তমানে যারা কর্মরত আছে, তাদের পুরনো নিয়েমেই বেতন-ভাতা ও মাইলেজ সুবিধা অব্যাহত রাখুক।’

এ বিভাগের আরো খবর