বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ঠান্ডায় জমে মরার চেয়ে বাড়িতে না খেয়ে মরা ভালো’

  •    
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:৩১

রিকশাচালক মাখন মিয়া বলেন, ‘শরীরে আগুন ধরায়ে দিলেও মনে হয় শান্তি লাগবে না। জানে বাঁচলে অনেক দিন রিকশা চালাতে পারব। খাবার জোগাড় হোক না হোক, ঘরে থাকব। রাস্তায় তেমন লোকও নাই। একা একা ঠান্ডায় জমে মরার চেয়ে বাড়িতে না খেয়ে মরা ভালো।’

ঘন কুয়াশাময় রাত আর সূর্যের তাপহীন দিন পার করছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ। তীব্র শীতের কারণে ঘরবন্দি মানুষ এখন প্রায় কর্মহীন। নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে খাবার ও গরম কাপড়ের সংকটে।

জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাও বাড়ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। দুই জায়গার তাপমাত্রা ৭ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের তাপমাত্রাও এর কাছাকাছি থাকে।

ঘন কুয়াশার মাঝেই সকালে কাজের খোঁজে ঠাকুরগাঁও রোডে এসেছেন রাজমিস্ত্রি দুলাল হোসেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে শীতের কারণে কাজ পাই না। সাতসকালে কুয়াশা আর ঠান্ডার মধ্যে মালিকরা কাজ করাতে চায় না। আমরা দৈনিক হাজিরায় কাজ করি। কাজ করলে টাকা পাই, না করলে পাই না।

‘মালিকদের টাকা আছে, তারা শীতের মধ্যে আয়েশে থাকে, কিন্তু মরণ হয় আমাদের। আমরা অভাবের মধ্যে দিন পার করছি। অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে। এভাবে আর চলতে পারছি না।’

শ্রমিক বাজারে ছাউনির নিচে জবুথবু হয়ে বসে ছিলেন কয়েকজন দিনমজুর।

তাদের মধ্যে আবু বক্কর জানান, তিনি এক ব্যবসায়ীর আলুর বস্তা প্যাকিংয়ের কাজ করেন। এবার দাম কম তাই এত শীতে ওই ব্যবসায়ী ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন না। এ কারণে কাজ নেই বক্করের। অন্য কাজের আশায় ছাউনিতে অপেক্ষা করছেন।

আরেক দিনমজুর পয়গাম আলী বলেন, ‘কয়দিন ধরে শীতে কোনো কাজ করতে পারিনি। দাদন কারবারির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে সন্তানদের মুখে আর খাবার তুলে দিতে পারব না।’

পয়গামের ছবি তুলতে গেলে বলেন, ‘এত ঠান্ডায় আমাদের ছবি না তুলে ভাতের ব্যবস্থা করেন ভাই।’

কয়েক দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলায় ঠাকুরগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে।

প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি কারখানার শ্রমিক আদম আলী বলেন, ‘কারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতি খুবই কম। প্রোডাকশন অনেক কম হচ্ছে। ঠান্ডার কারণে অসুস্থ হয়ে অনেকেই আসছে না।’

ঠান্ডায় রিকশা চালাতে পারছেন না ৪৫ বছর বয়সী মাখন মিয়া। তার কথা, ‘শরীরে আগুন ধরায়ে দিলেও মনে হয় শান্তি লাগবে না। জানে বাঁচলে অনেক দিন রিকশা চালাতে পারব। খাবার জোগাড় হোক না হোক, ঘরে থাকব। রাস্তায় তেমন লোকও নাই। একা একা ঠান্ডায় জমে মরার চেয়ে বাড়িতে না খেয়ে মরা ভালো।’

শুধু মানুষই নয়, ধানেরও ক্ষতি করছে প্রচণ্ড শীত। কৃষক হারুন মিয়া জানান, কোল্ড ইঞ্জুরিস রোগের কারণে ধানের বীজতলা স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে না। সবুজ থেকে রং হলুদ হয়ে যাচ্ছে।

প্রতি বছরই দেশের অন্য অনেক জায়গায় তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও উত্তরের জেলাগুলোকে প্রচণ্ড ভুগতে হয়। শীতের তীব্রতাও যেমন এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে বেশি, তেমনি শীত থাকেও বেশিদিন। নানা রোগে আক্রান্ত হন শিশু ও বৃদ্ধরা।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল আলম চয়ন জানান, বর্তমানে এই হাসপাতালে সাড়ে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অধিকাংশই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সদর উপজেলাসহ সব উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও শীতবস্ত হাতে মানবিক হয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করছে। জেলার নিম্ন আয়ের মানুষকে খাদ্য সহযোগিতার ব্যাপারে আমরা ভাবছি।’

এ বিভাগের আরো খবর