বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাইরাল ‘বালিশ মিষ্টি’ দিয়ে ভাগ্য ঘুরেছে রঞ্জিতের

  •    
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪১

৬৭ বছর বয়সী মিষ্টির কারিগর রঞ্জিত সরকার বলেন, ‘৫০ বছর ধরে মিষ্টি বানালেও এমন বিক্রি এর আগে কখনো হয়নি। এখন প্রতিদিন ৩০-৪০ কেজি মিষ্টি বানাই এবং তা বিক্রি করি। ’

দু-তিন মাস আগেও তেমন একটা বিক্রি ছিল না রঞ্জিত সরকারের দোকানে। টেনেটুনে চলতো সংসার। তবে এই পরিস্থিতি পাল্টে দেয় তার বানানো একটি মিষ্টির ভিডিও। ইউটিউবে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার গ্রামের এই মিষ্টি দোকানির।

এক থেকে ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি বানাতে পারেন রঞ্জিত। তিনি এই মিষ্টির নাম দিয়েছেন ‘বালিশ মিষ্টি’। এটি আসলে বড় ধরনের রসগোল্লা। তার মিষ্টির খবর এখন ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। প্রতিদিনই গোপালগঞ্জসহ এর আশপাশের জেলা থেকে মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে মিষ্টি খেতে বা কিনে নেয়ার জন্য লোকজন ভিড় করছেন।

রঞ্জিত সরকার জানান, দু-তিন মাস আগেও কেউ আসত না। সারা দিন বসে ৪-৫ কেজি মিষ্টি বিক্রি হতো। গত ৫০ বছর ধরে মিষ্টির দোকান তার। ৭ সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। ধারদেনা বেড়ে গিয়েছিল। তিন মেয়ে আর দুই ছেলে তার। আগেই তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দুজনও যার যার মতো রোজগার করে আলাদা থাকেন।

তিনি জানান, এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে দোকান সামলান। মাঝে মাঝে ছেলের মেয়ে স্কুল ছুটিতে তাদের সহায়তা করে থাকে। আগে এতটা চাপ ছিল না। এখন চাপ বেড়েছে। প্রতিদিনই ফোনে অর্ডারসহ দোকানের জন্য তাকে মিষ্টি বানাতে হয়। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে এখন কাজ করতে হয়।

৬৭ বছর বয়সী এই মিষ্টির কারিগর বলেন, '৫০ বছর ধরে মিষ্টি বানালেও এমন বিক্রি এর আগে কখনো হয়নি। এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি মিষ্টি বানাই এবং তা বিক্রি করি। ’

তিনি জানান, কেজিপ্রতি তিনি মিষ্টির দাম রাখেন ৩০০ টাকা। দোকানের জন্য এক কেজি ও দুই কেজি ওজনের মিষ্টি বানিয়ে রাখেন। বড় মিষ্টি অর্থাৎ পাঁচ থেকে ১০ কেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি বানান অর্ডার পেলে। বালিশের মতো দেখতে এবং বড় হওয়ায় তিনি এর নাম দিয়েছেন বালিশ মিষ্টি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল হলেই রঞ্জিত সরকারের দোকানে লেগে থাকে ভিড়। কেউ বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে দল বেঁধে খেয়ে যাচ্ছেন বড় মিষ্টি। আবার কেউ কেউ কিনে নিচ্ছেন পরিবারের জন্য।

গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ভেড়ার বাজার। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মধুমতী নদীর পাশে গড়ে ওঠা এ বাজারটি নদীবন্দর হিসেবেই পরিচিত। এ বাজারে ৮০ বছর আগে মিষ্টির দোকান নিয়ে বসেন রঞ্জিত সরকারের বাবা উপেন্দ্রনাথ সরকার। এরপর উপেন্দ্রনাথ সরকার মারা গেলে তার ছেলে রঞ্জিত সরকার মিষ্টির দোকানের দায়িত্ব নেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে।

মিষ্টির কারিগর রঞ্জিত বলেন, ‘মাস তিনেক আগে এক প্রবাসী আমার দোকানে বড় মিষ্টি দেখে তার ভিডিও নিয়ে ইউটিউবে ছেড়ে দেন। এরপর থেকে দোকানের মিষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়। আমার বালিশ মিষ্টির কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাঁশ ও টিন দিয়ে দোকান ঘরটি ঠিক করা হয়।

‘মিষ্টি তৈরির প্রধান উপাদান দুধ কিনে আনি বিভিন্ন স্থান থেকে। পরে সেই দুধ দিয়ে ছানা বানিয়ে, ছানার সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ দিয়ে এসব বালিশ মিষ্টি তৈরি করি।’

রঞ্জিতের দোকানে বৃহস্পতিবার মিষ্টি খেতে এসেছিলেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অভ্রদীপ রায়, অথৈই দাশ, কানিজ ফাতেমা ও সাদিয়া আফরিন মিম।

তারা জানান, ফেসবুকে দেখে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে এসেছেন বালিশ মিষ্টি তৈরি করা দেখতে ও খেতে। মিষ্টির স্বাদ ভালো।

স্থানীয় হরিদাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সরদার বলেন, ‘রঞ্জিত সকারের বাবাও মিষ্টি তৈরি করতেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি মিষ্টি তৈরি করছেন। তার কোনো সাহায্যকারী নেই। তিনি নিজেই মিষ্টি তৈরি করেন আর নিজেই বিক্রি করেন।

তার মিষ্টি অনেক সুস্বাদু। তিনি এক কেজি, দুই কেজি, পাঁচ কেজি ও ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি তৈরি করতে পারেন।’

এ বিভাগের আরো খবর