ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও দৈনিক সময়ের আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাবীবুর রহমানের মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন তার সহকর্মী, শিক্ষক ও স্বজনরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাবীবুর রহমানের স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে তারা এ দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে হাবীবের সহপাঠীরা এ স্মরণসভার আয়োজন করেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন হাবীবুর রহমান। স্মরণসভায় তার বিভাগের শিক্ষক, বিভিন্ন পেশায় কর্মরত বন্ধু, সাংবাদিক সংগঠনের নেতা, পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও স্মৃতিচারণ করেন।
হাবীবুর রহমানের বাবা পেয়ার মিয়া বলেন, ‘আমার বড় ছেলে হাবীবকে আমি আমার সামর্থ্য দিয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছি। আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে আমাদের দেখভাল করবে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাবে, মারা গেলে আমার জানাজায় কথা বলবে। এখন আমাকে ছেলের লাশ কাঁধে নিতে হয়েছে। এ রকম কষ্ট যেন কারও না হয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলায় আমার ছেলে যদি কোনো কষ্ট দিয়ে থাকে, আমি তার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘হাবীবুর রহমানের সঙ্গে আমার সব সময়ই যোগাযোগ ছিল। তার মৃত্যুর ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা হলে ভিন্ন ধরনের আলামত থাকার কথা। আমি চাই এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তদন্তের মাধ্যমে একটি ফল বেরিয়ে আসুক। তাহলে আমরা শান্তি পাব।’
হাবীবুর রহমানের চলে যাওয়া ‘অনেকটা রহস্যমিশ্রিত’ বলে মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন।
তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর স্মরণসভায় আসতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। বাবার কাছে সন্তানের কফিন যেমন ভারী, তেমনি একজন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীর কফিনও খুব ভারী। হাবীবুর রহমানের মৃত্যুর খবরটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। তার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার। হাবীবুরের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে আমরা পাশে থাকব।’
হাবীবের মৃত্যুতে দেশের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব শাখাওয়াত মুন।
তিনি বলেন, ‘হাবীবুর রহমানের স্মরণসভায় আসাটা খুবই দুঃখজনক ও কষ্টের। তার চলে যাওয়ায় দেশের যেমন ক্ষতি হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তার পরিবারের। আমরা সবাই তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করব।’
হাবীবের বন্ধু সাংবাদিক ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘হাবীবের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা মানতে আমার পেশাগত অভিজ্ঞতা সায় দেয় না। এটা উদঘাটনের দাবি করছি।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘হাবীব ভাইয়ের মতো একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের মৃত্যুর বিষয়টা যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, আমরা এটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশা রাখি। তার পরিবারের পাশে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় থাকব।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের হাবীব ভাই বেঁচে থাকবেন আমাদের ভালোবাসায়। তার পরিবারের পাশে আমরা আছি। হাবীবুর রহমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আসা কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখে অসংগতি আছে বলে মনে হয়েছে। যা-ই ঘটে থাকুক, তদন্ত হোক।’
দৈনিক সময়ের আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন হাবীবুর রহমান। ছবি: নিউজবাংলা
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহমেদ, ডিআরইউর সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, ডিএমপির বাড্ডা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তয়াছির জাহান, এনটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজান রহমান, যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাকিল হাসান ও মনিরুল ইসলাম, দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ, হাবীবুর রহমানের বন্ধু শাহিনুল ইসলাম ও ফারাবী হাফিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, বর্তমান সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন।
গত ১৮ জানুয়ারি হাবীবুর রহমানকে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।