গোপালগঞ্জে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে গত বছর ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলক পেঁয়াজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছিলেন এক চাষি। সেই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবারও এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন অনেকে। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে পেঁয়াজ চাষ হলেও এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তারা। তাই এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা তাদের।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, তাদের দেখাদেখি আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়বে। এতে জেলার পাশাপাশি দেশে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পারবেন কৃষকরা। এ জন্য তাদের সব ধরনের সাহযোগিতা করা হবে।
গত বছর পরীক্ষামূলক চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখা সদর উপজেলার কৃষক হানিফ মল্লিক এবার ২৪টি বেডে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে ফলন মাটির চেয়েও বেশি বলে জানান তিনি।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে আমার জানা ছিল না, ভাসমান বেডের ওপর পেঁয়াজ চাষ করা যায়। পরে চাষ করে দেখলাম মাটির থেকে ভাসমান বেডের উপর পেঁয়াজের ফলন ভাল হয়েছে।
‘পেঁয়াজ চাষ করতে আমার যা খরচ হয়েছে, তার থেকে আমি কালি (কলি) বিক্রি করে তার চেয়ে বেশি আয় করেছি। শুধু কালি বিক্রি করে আমি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করেছি। পেঁয়াজের যে ফলন দেখছি, তাতে আমার খরচের কয়েকগুণ লাভ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেডের উপর পেঁয়াজ চাষ করতে আমার কোনো সার বা কীটনাশক দিতে হয়নি। তাছাড়া জমির মাটির থেকে পেঁয়াজের সাইজও অনেক বড় হয়েছে। আশা করি এবার বাম্পার ফলন হবে।’
তার দেখাদেখি এ বছর তিনটি ভাসমান বেডের উপর পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষক আনিসুর রহমানও। পেয়েছেন সফলতাও।
বলেন, ‘গত বছর আমার এলাকার ভাইয়ের এই ভাসমান পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে সাফল্য দেখে এ বছর আমি তিনটি বেডে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজের ফলন ভাল হয়েছে। আমার এতে খরচের টাকা ওঠে লাভও হবে।’
এতে এলাকার অন্য কৃষকেরাও এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানান তিনি।
শুধু সদর উপজেলাতেই নয়; টুঙ্গিপাড়ার মিত্রডাঙ্গা, গোপালপুর, কোটালীপাড়ার হিরন, বর্ষাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এই পদ্ধতিতে সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় নিউজাবাংলাকে বলেন, ‘ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষের এই পদ্ধতিটি নতুন। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং মাটির তুলনায় উৎপাদনও বেশি।
‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের দিয়ে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করিয়ে সফলতা পেয়েছি। কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে যাতে কৃষকেরা বিশেষ করে যাদের জমি নেই, তারাও ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি চাষের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ তাদেরকে সব ধরনরে সহযোগিতা করবে।’
পেঁয়াজ চাষের এ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমবে বলেও মনে করেন তিনি।