বাগানের গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু মিষ্টি বরই। দেখতে লাল আপেলের মতো। নাম কাশ্মীরি বরই।
স্থানীয়দের কাছে কাশ্মীরি বরই আপেল কুল, বল সুন্দরী, বাড়ি কুল ও টক-মিষ্টি হিসেবেও পরিচিত। এই বরইয়ের রোগবালাই কম, খরচও অল্প।
মাত্র এক বছরের মধ্যেই কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষে সফল হয়েছেন নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মকমলপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন।
সফলতার গল্পের শুরু জানতে চাইলে ৩৫ বছর বয়সী লিটন নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩০০টি কাশ্মীরি ও ১২৫টি বল সুন্দরী জাতের চারা এনে ২ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিচর্যায় মাত্র ১১ মাসের মাথায় সবকটি গাছে থোকায় থোকায় বরই ধরেছে।
বরই চাষে এক বছরেই লিটনের এমন সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই ফল চাষে।
বলছেন, যদি স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হয়, তবে আগামীতে তারাও কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী জাতের বরই চাষ করবেন।
এক বছরে এত ফলন হওয়ায় অনেকেই বাগানটি দেখতে আসছেন ।
স্থানীয় কেশবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা মূলত সবজি হিসেবে শিম, বেগুন, লাউ, আলুর আবাদ করে থাকি। কখনও বাণিজ্যিকভাবে কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরইয়ের আবাদ করা হয়নি। লিটন দুই বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান করেছেন। এক বছরের মধ্যেই গাছগুলোতে বরই ধরেছে। বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে।
‘লিটনের বাগান ঘুরে দেখলাম। আমিও আগামী বছরে এই জাতের বরই চাষ করব ভাবছি।’
মারমা মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক বছর আগে যখন লিটন ভাই কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই গাছের চারা রোপণ করে তখন ভাবছিলাম হয়তো বরই ধরতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে। আর রোগবালাই বেশি, ফলন কম হবে। এখন দেখলাম কম খরচ, রোগবালাই তেমন নাই আর ফলও ধরেছে।
‘লিটন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম অন্যান্য সবজি চাষের চেয়ে বরই চাষে তুলনামূলক খরচও অনেক কম। পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এক গাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।’
বেলাল ভাবছেন, অন্যান্য সবজির পাশাপাশি তার জমিতে এ জাতের বরই চাষ করবেন। তবে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতার আশা করেন তিনি।
বরই চাষি লিটন হোসেন বলেন, ‘টিভিতে বিভিন্ন সময় কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষের সংবাদ দেখেছি। এ ছাড়া আমাদের এলাকাতে বেশ কয়েকবার কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ দিবসে বরই চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সেখান থেকেই মাথায় আসে বরই চাষ করার কথা। চারা রোপণের পর পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেয়া দিয়েছি। তাই চারাগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে।’
কাশ্মীরি বরই চাষি লিটন। ছবি:নিউজবাংলাখরচ ও লাভের বিষয়ে জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘আমার নিজের তেমন জমি নেই। তাই অন্যের জমি ৬ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক লিজ নিয়েছি। প্রতি বছর জমির মালিককে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।
‘বাগানে বরই গাছের গোড়া পরিষ্কার, স্প্রে করা, সার দেয়া, সেচ, ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ মোট খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো। প্রতিটি গাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ কেজি বরই পাওয়ার আশা করছি।’
বাজারে বরইয়ের দাম ভালো পেলে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করেন লিটন।
আগামী বছর আরও বেশি জমিতে বরই চাষের পরিকল্পনা আছে লিটনের। তবে তার প্রবল বিশ্বাস বাজারে দাম কম হলেও বরই চাষে লাভ হবেই।
নওগাঁ সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন আলী বলেন, ‘নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু বরই চাষের জন্য উপযোগী। ফলন ভালো, দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু এ বরইগুলো। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা এখন নতুন নতুন ফসল ও ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নওগাঁর এ অঞ্চলে এই জাতগুলোর বরই চাষ তেমন নেই বললেই চলে। কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী বরই চাষে ফলন বেশি ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের এই জাতের বরই চাষে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
আগামী বছর বরই চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় এই কৃষি কর্মকর্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় বরইয়ের আবাদ হয়েছে ৩৪৩ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৭০ টন। আর প্রতি হেক্টর জমিতে ৭৫০ টন।
আগামীতে এ জাতের বরইগুলোর বাগান আরও বাড়বে পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অফিস।