জনগণের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও সাংসদ হাসানুল হক ইনু।
বৃহস্পতিবার প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের বিকেলে চতুর্থ পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন।
এই পর্বে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির বৈজ্ঞানিক সেক্রেটারি ডা. আলেয়া নাহিদ।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাটা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়া দরকার। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে। পাঁচ থেকে সাত বছর লাগবে। এ জন্য আগামী স্বাস্থ্য খাতে আরও বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে অসংক্রামক রোগ কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ মানে অছোঁয়াচে রোগবালাই। আমরা এখন ছোঁয়াচে রোগের ধাক্কায় আছি। অসংক্রমণ রোগ যাতে প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্যই সম্মেলন।
চিকিৎসক ডা. সামিউল ইসলাম সাদি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত। জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আনতে পারলে তাহলেই কিন্তু আমরা এটা থেকে অনেকাংশে ভালো থাকতে পারি। আমরা যদি নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ না করি, স্থূলতা, ধূমপান পরিহার না করি, হাঁটাচলা না করি, ব্যায়াম না করি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পরি, তাহলে হাসপাতাল তৈরি করে কখনও আমরা রোগীর চাপ সামাল দিতে পারব না।’
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রোগ এবং রোগের চিকিৎসায় গুরুত্ব দিই। কিন্তু রোগের প্রতিরোধের যে বিষয় আছে, আমরা যদি সেই দিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে অনেক সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারব। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
‘ক্যানসারের বেলায় আমার খুব দেরিতে ডায়াগনোসিস করি। তখন আর কিছু করার থাকে না। বায়ুদূষণের কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৩০ শতাংশ বায়ুদূষণ পার্শ্ববর্তী দেশের কারণে হয়ে থাকে।
‘আমরা যদি অসংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে না নামি, তাহলে এর ব্যাপকতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এর ব্যাপকতা রোধ করা সম্ভব না।’
ডা. আব্দুন নুর তুষার বলেন, ‘মানুষের গড় আয়ু বাড়ায় অসংক্রামক রোগসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি বাড়ছে। নতুন নতুন রোগও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। আমাদের দেশ ছোট, মানুষ বেশির কারণে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’
সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের জন্য আমরাই দায়ী। আমরা নিজেরাই খেলার মাঠ দখল করে রেখেছি। আমরা খাল দখল করে রেখেছি। সুতরাং সেই পরিবেশটা আমরা দিতে পারছি না। আসুন, আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরি।’
সে জন্য পাড়া-মহল্লাসহ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পেইন করার তাগিদ দেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘আমার যারা মিরপুরে থাকি সেখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৭৩ একর জমি আছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়। এর মধ্যে মাত্র তিন একর জমি বাদে বাকি ১৭০ একর জমি দখল হয়ে গেছে। সুতরাং একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের কিন্তু পানি চলে আসছে। কিছু কিছু রোগের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমাদের বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরের খাবার খেতে হবে। ভেজাল মুক্ত খাবার খেতে হবে।’
কোভিড আক্রান্ত থাকার কারণে জুমে যুক্ত হয়ে কি-নোট উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক সাংবাদিকতার গুরুত্ব ছিল না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির রিপোর্ট ছাড়া আর কোনো স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুসন্ধানী রিপোর্ট খুব একটা চোখে পড়ে না। এর কারণও আছে। যে ধরনের প্রশিক্ষণ পাওয়া দরকার, স্বাস্থ্যবিষয়ক সাংবাদিকরা সেই ধরনের প্রশিক্ষণ পান না। এনসিডির (নন-কনটাজিয়াস ডিজিসেস) বিরুদ্ধে আমাদের দেশে তেমন কোনো আন্দোলন নেই। চোখে পড়ে না। ডায়াবেটিস নিয়ে কিছুটা চোখে পড়ে।’
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদি, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোমেন রাইহান। প্যানেল আলোচক ছিলেন ইএএসডির উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নুর তুষার, সিডার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. জহিরুল ইসলাম, ব্রিটিশ হাইকমিশনের হেলথ অ্যাডভাইজার ডা. শফিকুল ইসলাম।