ভলিবল মাঠে ফুটবল খেলছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। আয়েশী ভঙ্গিতে বল নিয়ে ছোটাছুটি করছেন তারা। কাছাকাছি এগোতেই মাঠের বাইরে থাকা এক শিক্ষার্থী বললেন, ‘এখানে আজ থেকে ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রতিযোগিতার নাম- ফরিদবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্ট।’
স্রেফ কৌতুক করে এমন নাম দেয়া হয়তো। তবে এতেও প্রকাশ পেল উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ।
ফরিদ মানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার পর্যন্ত আন্দোলনে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায় অনেকটাই সুনসান ক্যাম্পাস।
গত ১৩ জানুয়ারি এক প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শাবি সিরাজুন্নেছা হলের ছাত্রীরা। ১৬ জানুয়ারি ছাত্রীদের আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও ১৭ জানুয়ারির মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। রাত থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মিছিল-স্লোগান, গান-কবিতা চলে অবিরাম। বুধবার থেকে অনশন শুরু করেন তাদের কয়েকজন।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বুধবার সকালে আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙানোর পর ক্যাম্পাস ফিরতে শুরু করে আগের রূপে।
পরিবর্তনটা টের পাওয়া যায় ক্যাম্পাসে প্রবেশের শুরুতেই। ফটকের পাশের যাত্রীছাউনিতে এতদিন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সেখানে দেখা গেল দু-একজন ছাত্রকে আড্ডা দিতে।
পুলিশের গাড়ির প্রবেশ ঠেকাতে আন্দোলন শুরুর দিনে ফটক বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। বালুর বস্তা স্তূপ করে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা। ফলে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হয়েছে ফটেকের পাশের সরু পথ দিয়ে হেঁটে।
বৃহস্পতিবার ১১ দিন পর প্রথম খোলা পাওয়া গেল ফটক। গাড়ি, রিকশা, বাইক সবই চলছে নির্বিঘ্নে।
মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই হাতের ডান পাশে উপাচার্যের বাসভবন। সেখানে অনশনকারী শিক্ষার্থী নেই, নেই উপাচার্যের ভবনের সামনে তাদের বসানো ব্যারিকেড।
নিরাপত্তাকর্মীরা জানালেন, উপাচার্য বাসায় আছেন। সারা দিন ঘর থেকে বের হননি। তবে তিনি প্রশাসনিক কাজ করেছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিতে সই করেছেন।
গোল চত্বরে দেখা গেল দু-একজন শিক্ষার্থী আড্ডা দিচ্ছেন। হাঁটাহাঁটি করছেন কয়েকজন।
আড্ডায় থাকা ছাত্রী শায়লা ইয়াসমিন বলেন, ‘এতদিন তো মিছিল-স্লোগানে ছিলাম। উত্তেজনা শঙ্কা ছিল। কিন্তু আজ অনেকটা রিল্যাক্স। আজ অনেক দিন পর ভালো করে ঘুমিয়েছি। বিকেলে হল থেকে বেরিয়ে এখানে আড্ডা দিতে এসেছি।’
অনশন করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ২০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১৯ জনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাব্বির আহমদ বলেন, ‘কেবল রবিন নামে একজনের টিউমার অপারেশন হওয়ায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা হাসপাতাল থেকে আজ ছাড়া পেয়েছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে গিয়ে দেখা যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আজ থেকে আমরা অফিস করেছি। গত কয়েক দিন ক্যাম্পাসে এলেও অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আজ রাতে আমরা মুক্ত আলোচনা করব। প্রতিদিনই কিছু কর্মসূচি থাকবে।’