রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রাম; যেখানে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। পরিবারগুলোতে পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে।
এই গ্রামটির পশ্চিমে তিন কিলোমিটার দূরে বন্যাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পূর্বে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।
এর আশপাশে আরও দুটি স্কুল আছে; তাও আরও দূরে। এর মধ্যে বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় তিন কিলোমিটার এবং সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
তবে নতুন ঘুরঘুরিয়ায় বর্তমানে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ‘নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৩ সালে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের সময় এলাকার কিছু তরুণ সরকারীকরণের আশায় পূর্বের নামে বিদ্যালয়টি ফের চালু করে। কিন্তু এ ধাপেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ না হওয়ায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি।
বর্তমানে সেখানে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর থাকলেও কোনো শ্রেণি কার্যক্রম চলে না। সেটি যেন ঝড়ে উড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মাত্র।
বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ
অভিভাবকরা বলছেন, তাদের গ্রামের আশপাশে এসব বিদ্যালয় থাকলেও বাড়ি থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। ফলে এখানকার শিশুরা একদিকে যেমন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে নিরক্ষরতা ও শিশুশ্রম বাড়ছে। এতে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। তাই গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিউজবাংলাকে স্থানীয় চিরঞ্জিত সরকার বলেন, ‘গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের ২-৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পাই না। তাই সরকারিভাবে গ্রামটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান তিনি।’
বন্ধ হয়ে যাওয়া নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভুপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘নতুন ঘুরিয়া গ্রামেই ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে। তাদের অনেকেই নিকটবর্তী স্কুল না থাকায় লেখাপড়া করে না।’
গ্রামটিতে সরকারি উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হক বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
নিউজবাংলাকে বালিয়াকান্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিবুল হাসান বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা পাওয়া যায়, তাহলে সরকারিভাবে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে এক হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে সুপারিশ করা হবে।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, ‘স্কুল দূরে হওয়ায় বাচ্চারা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে- এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সরেজমিন পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’