বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শখের কমলায় জুয়েলের হাসি

  •    
  • ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:০৭

আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল জানান, চলতি বছর তিনি বাগান থেকে ২৫০ মণ কমলা উৎপাদন করতে পারবেন। ২০০ টাকা কেজি হলেও ২ লাখ টাকায় সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন ।

১০ বছর আগে শখের বসে স্থানীয় হর্টিকালচার থেকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে আনেন আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। দুই বছর পর সেই চারা থেকে প্রথম ফল পান। সুমিষ্ট কমলা খেয়ে জুয়েল সে জাতের চারা দিয়ে বাগান করার পরিকল্পনা করেন।

পরে দার্জিলিং জাতের আরও কমলার চারা রোপণ করেন। সে রোপণের উদ্দেশ্য ছিল কমলা চাষ করে লাভবান হওয়া। কিছুটা সময় লাগলেও দুই বছর থেকে লাভের মুখ দেখেছেন জুয়েল।

ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে কমলার বাগান করেছেন জুয়েল। তার বাগানে এখন রয়েছে তিন শতাধিক কমলা গাছ।

আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল জানান, চলতি বছর তিনি বাগান থেকে ২৫০ মণ কমলা উৎপাদন করতে পারবেন। ২০০ টাকা কেজি হলেও ২ লাখ টাকায় সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে এক হাজার ৩২টি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলার পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের সাতটি কমলাবাগান গড়ে উঠেছে।

জেলায় অনেকেই কমলার বাগান গড়ে তুললেও জুয়েল ছাড়া অন্যরা দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ ভালোভাবে করতে পারেননি।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে।

বাগানটি দেখতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বাগানেই বিক্রি করা হচ্ছে কমলা।

নিজের তৈরি কমলাবাগানে জুয়েল। ছবি: নিউজবাংলা

বাগানমালিক জুয়েল জানান, বাগানের বয়স ১০ বছর হলেও তিন বছর হলো ভালো ফলন আসা শুরু হয়েছে। এবার ফলন সবচেয়ে বেশি। নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে অন্য জেলাতেও।

জুয়েল বলেন, ‘তিন শতাধিক গাছের বাগানটির প্রতিটিতে ৮০০ থেকে ৯০০ কমলা ধরেছে। আমার বাগানের কমলা খেতে মিষ্টি হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করছি ১৮০-২০০ টাকা করে।’

আগে বাগানটি থেকে পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রি হতো, এবার সেটা প্রায় ২০ লাখ টাকার হবে বলে জানান জুয়েল।

জুয়েল বাগানের পাশাপাশি একই প্লটে চারা উৎপাদন শুরু করেছেন। সীমান্ত এলাকায় ফল বাগান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে নিচ্ছেন পরামর্শ।

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘শহর থেকে এসেছি কমলা বাগান দেখতে। আমি দার্জিলিংয়ে বাগান দেখেছি। কিন্তু এখানে কমলা বাগান যে সুন্দর তা দার্জিলিংয়ের বাগানকেও হার মানাবে। আর এই কমলা অনেক মিষ্টি। আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি তা এই বাগান দেখেই বোঝা যায়।’

দর্শনার্থী রবিউল আহসান বলেন, ‘পরিবারসহ কমলাবাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলাবাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি। আজ বাস্তবে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। কিনে খেলাম, নিয়েও যাচ্ছি। অনেক মিষ্টি আর রসালো কমলা।’

কমলা বাগানে প্রথম থেকেই কাজ করেন নরেন মোহন। তিনি বলেন, ‘আমি বাগানের প্রথম থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন হাজারের ওপর মানুষ আসে বাগান দেখতে। আমরা বাগানে ৮-১০ জন এখন কাজ করছি। কমলাগাছ থেকে নামাতে ৩-৪ জনকে কাজ করতে হয়। ফল চুরি ঠেকাতে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিতে হয়।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন জানান, বছর দশেক আগে সরকার একটি প্রকল্প নেয়। সেই থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষের শুরু। কমলাবাগানে সফলতা পেতে বুঝে-শুনে পরিচর্যার ব্যাপার আছে। জুয়েল কৃষি দপ্তর থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘কৃষকরা যদি এভাবে কমলার বাগান করতে এগিয়ে আসেন, তাহলে কৃষিতে একটা বিপ্লব ঘটবে। আর কমলা দেশের বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমাদের দেশের কমলা দিয়েই ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর