করোনা মহামারির মধ্যে আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে সাতক্ষীরা প্রবীণ আবাসন কেন্দ্রে। গত এক বছরে সেখানে নতুন আরও ১০ প্রবীণ আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমটিতে ২২ জন প্রবীণ বসবাস করলেও তাদের অধিকাংশই এখনও করোনার টিকা পাননি।
এ অবস্থায় করোনা আতঙ্কে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন সাতক্ষীরা শহরের প্রবীণ আবাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষ।
২০১৫ সালের ১ জুলাইয়ে ‘নবীনদের উদ্যোগে প্রবীণদের জল দান, ক্ষুধার্তকে অন্ন; আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দান, ইহাই মানব ধর্ম’ স্লোগান নিয়ে আরা সংস্থার উদ্যোগে হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল বৃদ্ধাশ্রমটি।
প্রথমে সিটি কলেজের পেছনে ৩ কাটা জমির ওপর স্থাপন করা হলেও স্থান স্বল্পতার কারণে পরে এটিকে শহরের মাগুরা এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। ২৫ কাঠা জমির ওপর সেই বৃদ্ধাশ্রমের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
স্থাপনের পর থেকেই নানা টানাপোড়েনে চললেও বৃদ্ধাশ্রমটি সাতক্ষীরা জেলাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর অসহায় প্রবীণদের শেষ বয়সের ঠিকানা হয়ে উঠেছে।
তবে মহামারির মধ্যে এই আশ্রয়স্থল প্রবীণদের কাছে এখন বিষাদময়। এর জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকা স্বল্পতা ও বাইরে থেকে অনুদান কমে আসাকেই দায়ী করেছেন বৃদ্ধাশ্রমটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘প্রবীণদের জন্য বাইরে থেকে যে অনুদানটা আসত, সেটা করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তির সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে চলছে বৃদ্ধাশ্রমটি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার শুরুর সময় বৃদ্ধাশ্রমটিতে ১৬ জন প্রবীণ আশ্রিত ছিলেন। এর মধ্যে চারজন মারা যান। তবে করোনার মধ্যে এখানে আরও ১০ প্রবীণ আশ্রয় নিয়েছেন।’
নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ২২ জনের অধিকাংশই করোনার টিকা পাননি। জাতীয় পরিচয়পত্রের জটিলতা ও টিকাকেন্দ্রে যেতে অক্ষমতার কারণেই এমনটি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বৃদ্ধাশ্রমটি পরিদর্শন করে সেখানে টিকার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
নজরুল বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আশ্রিতদের মধ্যে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করেন না তাদের পরিবারের সদস্যরা। যতটুকু সম্ভব হয় মানুষের কাছে হাত পেতে নেয়ার চেষ্টা করি।’
এ কারণে করোনার টিকার ব্যবস্থা করাসহ বৃদ্ধাশ্রমটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতদের টিকা না পাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়ে টিকার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।