বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওপারে কাঞ্চনজঙ্ঘা, এপারে ফুটেছে টিউলিপ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩৮

পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করলেও মাস পেরোনোর আগেই তেঁতুলিয়ার বাগানে বাগানে হাসতে শুরু করেছে টিউলিপ। টিউলিপের এমন হাসি দেখে অভিভূত চাষিরাও।

ইউরোপের দেশগুলোতে শীতে যখন নিষ্প্রাণ চারদিক, তখনই নতুন প্রাণের আবির্ভাব ঘোষণা করে সারি সারি টিউলিপ। পাশ্চাত্যের কবি ভি ডব্লিউ ল্যাশিকোট্টে তাই হয়তো বলেছিলেন, বাগানে জন্মায় টিউলিপ, সারি সারি, সোনালি। প্রত্যেকে তার খালি কাপ তুলে ধরেছে, পান করতে রোদ আর বৃষ্টি।

শুধু সোনালি নয়, সারি সারি গাছে ছয় রঙের টিউলিপ ফুটতে শুরু করেছে উত্তরের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ায়। এখানকার টিউলিপ বাগানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সীমান্তের ওপারের শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাও।

শীতপ্রধান দেশের এই ফুল চাষ করছেন তেঁতুলিয়ার চাষিরা। বেশ কয়েক মাস ধরে এই অঞ্চলে শীতার্ত আবহাওয়া বিরাজ করে বলে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

শীতপ্রধান দেশগুলোতে অনিন্দ্যসুন্দর এই ফুলের অন্তত দেড় শ প্রজাতি দেখা যায়। শুধু টিউলিপের বাগান দেখতেই অসংখ্য মানুষ এসব দেশে গিয়ে হাজির হন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়ও বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। ফলে এই ফুলকে ঘিরে স্বপ্নের রঙিন ডালা খুলে বসেছেন এক দল চাষি।

টিউলিপ বাগানের যত্নে ব্যস্ত সারিয়ালজোত গ্রামের আয়শা আক্তার। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ উৎপাদনের এমন এই উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন।

জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি উপজেলার দর্জিপাড়া এবং সারিয়াল জোত গ্রামের ৮ চাষি ৪০ শতক জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপের বীজ লাগিয়েছেন।

পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করলেও মাস পেরোনোর আগেই বাগানে হাসতে শুরু করেছে টিউলিপ। টিউলিপের এমন হাসি দেখে অভিভূত চাষিরাও। সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে লাভবান হওয়ারও আশা করছেন তারা।

ইএসডিওর নারী সদস্য ও উদ্যোক্তারাই মূলত টিউলিপ চাষি। সারিয়ালজোত গ্রামের টিউলিপ চাষি আয়শা আক্তার বলেন, ‘টিউলিপ ফোটা নিয়ে খুব আশঙ্কায় ছিলাম। আমি ৫ শতক জমিতে ৫ হাজার চারা লাগিয়েছি। ফুল ফোটায় আমি অভিভূত।’

আয়েশার মতে, শুধু অর্থ নয়, ফুল চাষ আনন্দও দেয়। তিনি জানান, এবার সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে পরের বছর আরও বেশি করে টিউলিপ চাষ করবেন বলে জানান আয়েশা।

২৫ থেকে ২৮ দিনের মাথায় ফুল ফোটার কথা থাকলেও তেঁতুলিয়ায় ২৩ দিনের মাথায় টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। ৬ প্রজাতির টিউলিপ ছয় রঙে ফুটছে। তবে বেগুনি রঙের টিউলিপই এখন বেশি ফুটছে।

টিউলিপ ফুটতে না ফুটতেই বাগানগুলোতে ছুটে আসছেন পর্যটকরাও।

বাগানে কিনারায় দাঁড়িয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ আল-আমিন বলেন, ‘আমি শুনেই ছুটে এসেছি দেখতে। আমি বিস্মিত। তেঁতুলিয়ায় সরাসরি টিউলিপ দেখব কখনও ভাবিনি। এর আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিউলিপের ছবি এবং ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’

ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, যেখানে যত বেশি ঠান্ডা সেখানে তত বেশি টিউলিপ ফোটে। শীতকালে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকে বলেই পরীক্ষামূলক টিউলিপ চাষের পরিকল্পনা করেন তারা।

এ জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে টিউলিপের বীজও সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি বাল্ব বা বীজ প্রায় ৬৫ টাকা মূল্যে কেনা হয়েছে। প্রথমবারেই ফুল ফোটায় তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন- তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক আকারে টিউলিপ চাষ সম্ভব।

শহীদ উজ জামান আরও জানান, টিউলিপ চাষ করতে ৮ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। এর বেশি হলে সাধারণত টিউলিপ ফোটে না। তেঁতুলিয়ায় এ ধরনের আবহাওয়া বেশ সময় নিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। টিউলিপ চাষ এই এলাকার পর্যটনকে আরও এগিয়ে নেবে। ঘটবে আর্থসামাজিক উন্নয়নও। আমরা টিউলিপের বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু ফুল ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই টিউলিপ কেনার জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা শুধু টিউলিপ নয়, দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত ফুলগুলোও তেঁতুলিয়ায় চাষ করতে চাই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে টিউলিপ চাষ তেঁতুলিয়ায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছি। অন্য কেউ উদ্যোগী হলেও আমরা সহযোগিতা করব।

এ বিভাগের আরো খবর