দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে। মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) কনফারেন্সের প্রথম দিনে বুধবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এনসিডি বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উদ্বেগের কারণ হচ্ছে। ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য এটি দায়ী।’
অসংক্রামক রোগের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসার অন্যতম বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, ১০ শতাংশ ডায়াবেটিস ও ২০ লাখ মানুষ ক্যানসারে ভোগে।’
জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, তামাকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম ও ওষুধের অপব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়ত এনসিডি বাড়ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এনসিডি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রেগুলার চেকআপ ও আর্লি ডিটেকশন এনসিডি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। আর এর জন্য চিকিৎসাসেবা বাড়ানো ও প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন।’
সরকার এনসিডি প্রতিরোধে সেক্টরভিত্তিক প্রোগ্রাম নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশের আট বিভাগে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের সব জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের ডায়ালাইসিস ও আইসিইউ বেড দেয়া হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নার করা হয়েছে।’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালগুলো কোভিড রোগীতে ভর্তি হওয়ায় এনসিডি রোগীরা সেবাবঞ্চিত হয়েছেন। দেরিতে সেবা নেয়ায় মৃত্যু বেড়েছে। এখন দেশে কোভিড শনাক্তের হার ৩২ শতাংশ। দিনে ১৫ হাজারের বেশি কোভিড শনাক্ত হচ্ছে।’
করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক পরতে, জনসমাগম এড়াতে ও ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘অসংক্রামক ব্যাধির কারণে বাংলাদেশের জন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক হেলথ কেয়ার পর্যায়ে এই রোগগুলোর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, ‘৩৫ বছরের ওপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়।
‘যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে। এ প্রতিরোধের জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
এ সংক্রান্ত যেসব সভা-সেমিনার হয়, সেগুলোয় অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
৫০ শতাংশই জানেন না তার উচ্চ রক্তচাপআন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে খুঁজলে দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন জানেন না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। মানুষ ফার্মেসিতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ওষুধ খাওয়া শুরু করেন, কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যান না। এ কারণে দেশে অসংক্রামক ব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার মধ্যেই জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সবাই মনে করে ধরা পড়ার পর অসুখটা হয়েছে। অসুখটা ধরা পড়া মানে তার শেষ সময়। আমাদের অসুখটা হওয়ার আগেই ডায়াগনোসিস করতে হবে।’
স্বাস্থ্য খাতে সীমাবদ্ধতাস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।’
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
বুধবার শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।