বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রশ্নফাঁস চক্রের হোতা সাবেক সেনাসদস্য, জড়িত শিক্ষক-জনপ্রতিনিধি

  •    
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৫১

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সাবেক সেনা ওয়ারেন্ট অফিসার নোমান সিদ্দীকি। তিনি একসময় র‍্যাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেছেন।’

প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের আওতাধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে অডিটর পদে নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসের হোতা সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দীকি। প্রশ্ন ফাঁস, সমাধান, উত্তর বিতরণ পুরো কাজটি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।

আট বছর ধরে এই সেনাসদস্য বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তার চক্রে রয়েছেন শিক্ষক-জনপ্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় করা দুই মামলার তদন্তে এমনই সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সাবেক সেনা ওয়ারেন্ট অফিসার নোমান সিদ্দীকি। তিনি একসময় র‍্যাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেছেন।’

একই সঙ্গে তার আত্মীয়স্বজনেরও চাকরির ব্যবস্থা করেছেন ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে। সম্প্রতি তিনি তার চক্রে আরও একাধিক সদস্যকে যুক্ত করেন। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকও রয়েছে। তাকেসহ আরও একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি জানান, আট বছরে নোমান অনেক ব্যক্তিকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। চাকরি পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নোমান আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গ্রেপ্তার ১০ জনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সোমবার হওয়া দুই মামলায় আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানা গেছে, এ ঘটনায় পলাতক এনটিআরসিএতে শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধন পাওয়া ফারুকের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল মাহবুবা নাসরীন রূপার। তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে ইডেন কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে সময় পার করে দেয়ার কারণে তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তদবির-বাণিজ্য করেও কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। সম্প্রতি তিনি সরকারি চাকরির জন্য বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

একপর্যায়ে ফারুকের মাধ্যমে পরিচয় নোমান সিদ্দীকির সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে আরও কিছু পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করেন রূপা। ওই সব পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয়া হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সর্বমোট ১৮ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয়া টাকা বিকাশ ও রকেটে লেনদেনের বিষয়টি অস্বাভাবিক হওয়ায় নজরে আসে গোয়েন্দাদের। এরপর তারা নজরদারি শুরু করলে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এরপর ২১ জানুয়ারি কাফরুল থানার সেনপাড়া পর্বতার ৪৯৮/৪ ভবনের এ/২ ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়।

এ সময় সেখান থেকে নোমান সিদ্দীকিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তার বাসা ও দেহ তল্লাশি করে চারটি মোবাইল ফোন সেট ও একটি ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। পরে সেখান থেকে ছয় পাতা অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার ২০২২-এর পার্ট-১-এর এমসিকিউ প্রশ্নপত্রের ফটোকপি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে একই পরীক্ষার আট প্রার্থীর নামের তালিকা উদ্ধার করা হয়। ওই প্রার্থীরা হচ্ছেন ফারদিন ইসলাম, লুৎফর রহমান, আমিনুল ইসলাম, সেলিম মাতবর, আহাদ খান, পারুল বালা, আকলিমা খাতুন ও মোরশেদ।

একই সময় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান আজাদের দেহ তল্লাশি করে মফিজুর রহমান, পল্লব কুমার, হাসিবুল হাসান, সুরুজ আহম্মেদ নামে আরও চারজনের প্রবেশপত্র ও হাতে লেখা উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়। একই অভিযানে নাইমুর রহমান তানজীর ও শহিদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করলে তাদের কাছ থেকেও ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তরপত্র ও বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একাধিক বিকাশ ও রকেটের নম্বর উদ্ধার করা হয়। সেখানে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে গুলশান জোনের এডিসি রেজাউল হক জানান, নোমান পুরো কাজটি সমন্বয় করতেন। আজাদ অডিটর হিসেবে চাকরি করতেন। তাকে বছরখানেক আগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে তার সম্পৃক্ততা দীর্ঘদিনের। তানজীর নোমানের ভাগ্নে। আর গ্রেপ্তার শহীদুল্লাহ ছাত্র।

রেজাউল হক বলেন, ‘আজাদ অনেক বাকপটু। তিনি এমনভাবে চাকরিপ্রত্যাশী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে ডিল করতেন, যেন তিনিই চাকরি দিচ্ছেন। আজাদের মূল যোগাযোগটা ছিল নোমানের সঙ্গে।’

চক্রের প্রধান আসামি নোমানের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থানার চরআলগিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আবু তাহের মিয়া। প্রশ্নফাঁসের টাকায় তিনি ঢাকায় ও তার গ্রামের বাড়িতে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। এ বিষয়গুলোও তদন্তে তুলে ধরা হবে। এ ঘটনায় তার ছাপাখানার কেউ জড়িত আছে কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

২১ জানুয়ারি নোমান সিদ্দীকির বাসায় অভিযান শেষে পুলিশ বিজি প্রেস স্কুলে অভিযান চালায়। সেখান থেকে পরীক্ষারত অবস্থায় ভাইস চেয়ারম্যান রূপাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জার থেকে হিরণ খান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে প্রশ্নফাঁস নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। এমনকি ফাঁস হওয়া প্রশ্নে কিছু উত্তরও পাওয়া যায়।

এরপর পুলিশ রূপার দেয়া তথ্যমতে রমনা থানার আওতাধীন ৫৫/১ নিউ শাহীন হোটেলের ২৪ নম্বর রুমে অভিযান চালায়। সেখান থেকে মো. আল আমীন আজাদ রনি, মো. রাকিবুল হাসান, মো. হাসিবুল হাসান ও নাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।

ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রে অবস্থান করা পরীক্ষার্থীদের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান পাঠানো হচ্ছিল। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকেও একাধিক বিকাশ ও রকেটের সিম উদ্ধার করা হয়। ওই সব সিম দিয়েও মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

গুলশান জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার খলিলুর রহমান জানান, রমনার হোটেল থেকে গ্রেপ্তারদের নামে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি পাঁচজন। এ ছাড়া পলাতক হিসেবে আরও একাধিক ব্যক্তির নামে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আসা করা হচ্ছে, এ মামলায় প্রশ্নফাঁসের রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ২১ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও রমনার বিভিন্ন এলাকায় আলাদা দুটি অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি ইয়ার ডিভাইস, ছয়টি মাস্টার কার্ড, মোবাইল সিম হোল্ডার, পাঁচটি ব্যাংকের চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১০টি স্মার্টফোন, ছয়টি ফিচার মোবাইল ফোন, ১৮টি প্রবেশপত্র ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর