পুঁজিবাজারে নতুন বছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে বুধবার। কমেছে সূচকও। সূচকে ছিল উত্থান-পতনের জোয়ার। শেয়ার কেনাবেচায় যেন ইঁদুর-বেড়ালের খেলা চলেছে।
এদিন লেনদেন শুরু হয় ৭ হাজার ৩২ পয়েন্ট দিয়ে। শুরুর ১০ মিনিটে সূচক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭২ পয়েন্ট। কিন্তু সেখান থেকে সূচক ৭ হাজার ৩৩ পয়েন্টে নামতে সময় নিয়েছে মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
আবার শেয়ার কেনার আগ্রহে সূচকে উত্থান দেখা যায়। বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে সূচক পৌঁছে ৭ হাজার ৫২ পয়েন্টে। দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে সেখান থেকে ১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৩৮ পয়েন্ট। ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত সূচক পতন থেকে উত্থানে ফেরার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় সূচক দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩২ পয়েন্ট।
এ নিয়ে টানা ১০ কর্মদিবস ৭ হাজারে স্থির রয়েছে ডিএসইর প্রধান সূচক- ডিএসইএক্স। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ৭ হাজারে অবস্থান করছে এই সূচক।
অন্যদিকে সূচকের পতন হলেও নতুন বছরে উত্থানের পুঁজিবাজারে হাজার কোটি টাকার লেনদেনও অব্যাহত আছে। বুধবার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। নতুন বছরের ১৯ কর্মদিবসের মধ্যে বুধবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ৮৯৪ কোটি টাকা।
বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতাই সূচক পড়ে যাওয়ার কারণ ধরা হচ্ছে।
বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত করোনার নতুন সংক্রমণ নিয়ে নির্দেশনা আসছে। আক্রান্তের সংখ্যাও অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা আছে।
‘যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আগেই জানিয়েছে যে সংক্রমণ বাড়লে ব্যাংকের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময় নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ করে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তার পরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে মন্দার সময়ে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়ে।
বুধবার খাতভিত্তিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। লেনদেনে এ খাতের ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। তার পরই আছে বস্ত্র খাত, যার লেনদেন হওয়া ৫৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে ২৫ শতাংশ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ৩৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে বুধবার।
এদিন লেনদেন হওয়া ৩৮১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৮টির, কমেছে ১৫৭টির। দর অপরিবর্তিত আছে ৬৬টি কোম্পানির।
যেসব কোম্পানির দর কমায় সূচকের পতন
বুধবার সূচক পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল মেঘনা পেট্রোলিয়ামের, দশমিক ১৭ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বার্জার পেইন্টের শেয়ারদর ১ দশমিক ১১ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে দশমিক ১ পয়েন্ট।
লিন্ডে বিডির শেয়ারদর ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারদর দশমিক ২১ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট।
এ ছাড়া এদিন সূচক কমায় ভূমিকা ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, সোনালী পেপার, বসুন্ধরা পেপার, ব্র্যাক ব্যাংক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের।
তবে সূচক পতনের পাশাপাশি বুধবার যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছিল তাদের ভূমিকা ছিল সূচক উত্থানে। এ তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে আইসিবি, স্কয়ার ফার্মা, এমজেএল বাংলাদেশ, ম্যারিকো, স্কয়ার টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মতিন স্পিনিং, আরএকে সিরামিক, গ্রামীণফোন ও রেনেটা।
লেনদেনে সেরা ১০
লেনদেনে সেরা দশের তালিকার শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার ৫৪ লাখ ১ হাজার ৮২০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে এদিন।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৭২ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫০ লাখ ৩২ হাজার ৮৮৭টি।
মতিন স্পিনিংয়ের ৩১ কোটি ২৩ লাখ টাকার, আরএকে সিরামিকের ২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার, ওরিয়ন ফার্মার ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২৭ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল জিপিএইচ ইস্পাত, অগ্নি সিস্টেমস, পাওয়ার গ্রিড ও সোনালী পেপার।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
এদিন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে সদ্য তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া নতুন লেনদেনে আসা বিডি থাই ফুড ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের এদিন ৯ শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক ছাড়া ১০ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় আছে কুইন সাউথ টেক্সটাইল ও অগ্নি সিস্টেমস।
এ ছাড়া ফনিক্স ফিন্যান্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। একই হারে দর বেড়েছে বিডি থাই ফুডের। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ইয়াকিন পলিমারের ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এ ছাড়া তাল্লু স্পিনিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ ও মতিন স্পিনিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
দরপতনের ১০ কোম্পানি
বুধবার সবচেয়ে বেশি ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ দর হারিয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ার। দরপতনের কারণে ৩৭৭ টাকা ১০ পয়সার শেয়ার পৌঁছেছে ৩৪৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ারদর কমেছে ৬ দশমিক ৮৮ ও ওরিয়ন ইনফিউশনের ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
৫ শতাংশের বেশি শেয়ারদর কমেছে আরও দুটি কোম্পানির, শমরিতা হসপিটালের ৫ দশমিক ২৮ ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এপেক্স ফুডের শেয়ারদর কমেছে ৪ দশমিক ৯৮, বসুন্ধরা পেপারের ৪ দশমিক ৬৬, জি মিনি সি ফুডের ৪ দশমিক ৪৫ ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির ৪ দশমিক ২০ শতাংশ।