বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালুকার সেই কুমির খামারে দুর্দিন

  •    
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:০৯

২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে ১৫ একর জমিতে মাত্র ৭৪টি কুমির নিয়ে খামারটি যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমানে খামারটিতে আড়াই হাজার কুমির থাকলেও নানা জটিলতায় এখন চলছে দুর্দিন।

বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষে আশা দেখিয়েছিল ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে ওঠা ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’।

বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে খামারটিতে প্রায় আড়াই হাজার কুমির থাকলেও আইনি জটিলতায় প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি মাশুল গুনছে খামারের কুমিরগুলো। স্বাভাবিক খাবার না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরার উপক্রম হয়েছে এসব প্রাণীর।

খামারে গিয়ে দেখা যায়, মুখ মাটিতে রেখে পানিতে পিঠ ভাসিয়ে স্থির হয়ে আছে প্রচুর কুমির। আওয়াজ না পেলে খুব বেশি নড়চড় নেই। বড় কুমিরগুলোকে কিছুটা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা যায়।

২০০৪ সালে উপজেলা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে ১৫ একর জমিতে মাত্র ৭৪টি কুমির নিয়ে খামারটি যাত্রা শুরু করে। ২০১০ সালে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬৭টি হিমায়িত কুমির রপ্তানির মধ্য দিয়ে এর বাণিজ্যিক রপ্তানি শুরু।

২০১৯ সাল পর্যন্ত এই খামার থেকে কুমির রপ্তানি হয়েছে। পাঁচবারে জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে কুমিরের ১ হাজার ৫০৭টি চামড়া। বর্তমানে খামারে আড়াই হাজার কুমিরের মধ্যে রপ্তানি উপযোগী রয়েছে প্রায় ৫০০টি।

তবে কোম্পানির ঋণ সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় রপ্তানি এখন বন্ধ। এখন শুধু খরচ হচ্ছে, আয় নেই। এ জন্য কুমিরগুলোকে খাবার দেয়া হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। প্রজনন ক্ষমতা ও শক্তি হারিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে কুমিরগুলো।

খামারের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাইম আরিফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে এসব কুমিরের খাবারে মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন সেটা লাখেরও নিচে নেমে গেছে। কারণ ২০২০ সালের অক্টোবরে কোম্পানির অ্যাকাউন্ট জব্দ হলে খাবারের স্বাভাবিক জোগান বন্ধ হয়ে যায়।’

আরিফুল জানান, আইনি জটিলতা ও বিকল্প আয় না থাকায় আশপাশের বিভিন্ন খামার থেকে মরা মুরগি সংগ্রহ করে কুমিরগুলোকে দেয়া হচ্ছে।

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ডিম থেকে ফুটে রপ্তানিযোগ্য হওয়া পর্যন্ত এদের পেছনে খরচ হতো আড়াইশ ডলার। লাভ হতো দেড় থেকে দুইশ ডলার। বর্তমানে কুমিরগুলো রপ্তানির উপযোগী হলেও আমরা তা পারছি না। কুমিরগুলোর মাংস মাটিচাপা দিয়ে নষ্ট করছি। অথচ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’

তত্ত্বাবধায়ক জানান, খামারে ২২ জন শ্রমিক। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে এখন খরচ করা হচ্ছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে এবং সেখান থেকে আয় দিয়ে কুমিরের খাবারের যোগান দেয়া ছাড়া আর বিকল্প নেই। যদি সেটাও না হয়, তাহলে পুরো ফার্ম বিক্রি করতে হবে।

সূত্র জানায়, খামারটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুশতাক আহমেদের। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল তখন ৪৯ শতাংশ।

কুমিরের খাবার, বাচ্চা প্রজনন ও পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়ায় কার্যত ভালুকার খামারটি সংকটে পড়ে। ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন মূল উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। মালিকানায় চলে আসেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার।

২০১৩ সালের দিকে খামারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর রেপটাইলস ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নেন পিকে হালদার, যা এখন পর্যন্ত শোধ হয়নি। আর্থিক খাতের আলোচিত এই ঋণখেলাপি এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব সোমেরও হদিস নেই। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে খামারটির কার্যক্রম।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এমএ আওয়াল তালুকদার বলেন, কুমির ব্যবসা ও চাষের পথিকৃত রেপটাইলস ফার্ম। রপ্তানিতে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক এ ব্যবসায় সফলতা দেখিয়েছে তারা। তবে, আইনি জটিলতায় খামারটি মুখ থুবড়ে পড়েলেও কুমিরের খাবার সংক্রান্ত কোনো জটিলতা আমার জানা নেই। এমন হয়ে থাকলে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর