ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতাসহ তিন জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য শেষে মামুনুলের আইনজীবী তাদের আলাদাভাবে জেরা করেন। এ সময় মামুনুল আদালতে হাজির ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে তিন জন সাক্ষ্য দেন।
সোনারগাঁ থানায় জান্নাত আরা ঝর্ণার করা ধর্ষণ মামলায় এ দিন সাক্ষ্য দেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, রয়েল রিসোর্টের নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেন ও রিসোর্টের এক্সিকিউটিভ মাহাবুবুর রহমান ।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ জানান, ঝর্ণার করা ধষর্ণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা আদালতে ঘটনার সময়ের নানা তথ্য তুলে ধরেন। তারা সবাই আদলতকে জানান, ঝর্ণা মামুনুলের স্ত্রী নন। আদালতে ইসমাইল হোসেন জানান, ৩ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে একটি সাদা গাড়ি রিসোর্টে গেলে তিনি গেট খুলে দেন। পরে গাড়ি থেকে মামুনুল ও এক নারীকে নামতে দেখেন তিনি। পরে তারা রির্সোটের ভেতরে প্রবেশ করেন। বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও সাংবাদিকরা রির্সোটের ভেতরে যান। সন্ধ্যার দিকে হেফাজতের লোকজন গিয়ে রির্সোট ভাঙচুর করে মামুনুল ও ওই নারীকে নিয়ে চলে যান।
রিসোর্টের এক্সিকিউটিভ মাহাবুবুর রহমান জানান, মামুনুল এক নারীকে নিয়ে রিসোর্টের ভেতরে ঢোকেন। এরপর তিনি ওপরে ৫০১ নম্বর কক্ষে চলে যান। বিকেলের দিকে এলাকার লোকজন, পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ভেতরে ঢোকেন। ২ ঘণ্টা পর স্থানীয়রা ওপরে ওঠেন।
মামলার আরেক সাক্ষী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু আদালতকে জানান, ঘটনার দিন তিনি জিআর স্কুলের নির্মাণ কাজ দেখতে যাচ্ছিলেন। তখন স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন, মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে রির্সোটে আছেন। তিনি সঙ্গে থাকা চারজনকে নিয়ে সেখানে ছুটে যান।
নান্নু আদালতকে আরও বলেন, ‘রির্সোটের গেটের সামনে গিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশ পেয়েছি। তাদের সঙ্গে ওপরে উঠেছি। পরে মামুনুলের কক্ষের দরজায় ধাক্কা দেয়ার পর তিনি খুলে দেন। এ সময় মামুনুলের কাছে সবাই জানতে চাইলে তিনি ওই নারীর নাম ও পরিচয় যা বলেছেন, তার সঙ্গে নারীর কথার মিল ছিল না। এর কারণে সবার সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে। ওই সময় মামুনুলের লোকজন এসে তাকে ও ওই নারীকে নিয়ে চলে যান।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি জানান, আদালত তাদের সাক্ষ্য নথিভূক্ত করেছে।
তবে তাদের সাক্ষ্য মানতে নারাজ মামুনুলের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন। তিনি আদালতে প্রত্যেক সাক্ষীকে আলাদাভাবে জেরা করেন।
সাক্ষ্য শুনানি শেষে আইনজীবী নয়ন বলেন, ‘আদালতে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের কাছে বার বার জানতে চেয়েছি, ওই নারী কি কারো কাছে কোনো অভিযোগ দিয়েছিলেন কি না। তারা বলেছেন, ঘটনার সময় কোনো অভিযোগ তাদের কাছে দেননি।’
সকাল ৯টায় কঠোর নিরাপত্তায় কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে নেয়া হয় মামুনুলকে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে দুপুরে আদালত এলাকা থেকে তাকে কাশিমপুর কারাগারের পাঠানো হয়েছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ মামলায় তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ আদালতে নেয়া হয় আসামি মামুনুলকে।
১৩ ডিসেম্বর মামুনুলের বিরুদ্ধে রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন অফিসার নাজমুল ইসলাম অনিক ও নিরাপত্তা প্রহরী রতন বড়াল সাক্ষ্য দেন। তার আগে ২৪ নভেম্বর মামুনুলের উপস্থিতিতে তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা আদালতে জবানবন্দি দেন।
২০২১ সালের গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামের এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে আটক হন মামুনুল হক। শুরুতে তিনি ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করলেও পরে জানা যায়, ওই নারীর সঙ্গে তার বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামুনুলের নামে ধর্ষণ মামলা করেন ঝর্ণা। এতে তিনি অভিযোগ করেন, মামুনুল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। বিয়ে করবেন বলে আর করেননি।
এই মামলার আগে ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল। এরপর সহিংসতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। ঝর্ণার মামলার পর তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গত ৩ নভেম্বর ধর্ষণ মামলায় মামুনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।