বিশ্ব অর্থনীতি ইস্যুতে খারাপ সংবাদ দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল -আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বজুড়ে যে তোড়জোড় চলছিল, ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রনে সেই ধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এতে আকাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না।
সংস্থাটি বলছে, মহামারি শুরুর তৃতীয় বছরের শুরুতেই বিশ্বজুড়ে চলমান পুনরুদ্ধারের বিষয়টি শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ওমিক্রন দ্রুত বিস্তারের ফলে অনেক দেশে নতুন করে চলাফেরার বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এতে বেড়েছে শ্রমের ঘাটতি। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে শুরু করেছে অনেক দেশে।
এই অনিশ্চিত পরিস্থিতে বিপাকে আছে বিভিন্ন দেশে; যাদের মাথায় রেকর্ড ঋণের বোঝা। আর এটিই বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসার মূল কারণ।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ হালনাগাদ প্রতিবেদনে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আশা করা হচ্ছিল ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অনেকখানি এগিয়ে যাবে। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। একটার পর একটা বাধা বা চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। বিশেষ করে ওমিক্রন বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গত অক্টোবরে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ এর পূর্বাভাসের চেয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট কম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে এমনটা ঘটবে বলে মনে করছে আইএমএফ।
গত বছরের ১২ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০২২ সালে হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ; যা দশমিক শূন্য দশমিক ৫ পয়েন্ট কম।
ওমিক্রন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে চলাফেরায় বিধিনিষেধ ফের আরোপ হয়েছে। তবে বাড়তে থাকা জ্বালানির দাম ও তা সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এরই মধ্যে এর ছাপ দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ উদীয়মান অর্থনীতির কিছু দেশে।
বলা হচ্ছে, চীনের আবাসন খাতে ছাঁটাই এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের খরচ মেটাতে হিমশিম খাওয়ায় মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি তৃতীয় বছরে (২০২০ সালে শুরু) প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে।
মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। আর চীনের ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
আইএমএফ সতর্ক করছে, পরিস্থিতি না পাল্টালে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
যদিও ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। সবশেষ গত ১২ অক্টোবরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।