দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে। শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের কোটায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান পরীক্ষা থেমে গেছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও চলছে বাণিজ্যমেলা, খেলাধুলাসহ সবই। এতে নাখোশ এসব শিক্ষার্থীরা। তাই থেমে যাওয়া পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেষ করার দাবিতে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কেউ কেউ।
বরিশাল
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চালু এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন সরকারি বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সড়কে মানববন্ধন করেন। এছাড়া একই সময় একই স্থানে আরেকটি মানববন্ধন করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।
শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে পরীক্ষা চলছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা করোনার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে মাত্র ২/৩টি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে রয়েছে।
‘বানিজ্যমেলাসহ নানা কর্মকাণ্ড চালু রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যহত হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’
কুমিল্লা
স্থগিত করা সব পরীক্ষা না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কুমিল্লার কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজসহ কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে স্থগিত করা পরীক্ষাগুলোর রুটিন দেয়া না হলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘২৯ জানুয়ারির দ্বিতীয় বর্ষের, চতুর্থ বর্ষের তিনটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। যেটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই চলে। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের পরীক্ষা নেয়া হোক।’
‘আমরা কুমিল্লার ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে পরীক্ষা নেয়ার জন্য নতুন রুটিন প্রকাশ না করলে আমরা ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করব। আমাদের আন্দোলন শুরু হলে থামাতে পারবেন না। আমাদের দাবি মেনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবে।’
রাজশাহী
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান পরীক্ষাগুলো শেষ করার দাবিতে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শহরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা পরীক্ষার দাবিতে ‘সব চলে সব হয়, পরীক্ষা দিতে কীসের ভয়?’, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য মানি না মানবো না। খেলা হয়, মেলা হয়, পরীক্ষা দিতে কীসের ভয়?’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ফয়জুল করিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
বলেন, ‘৭ তারিখ থেকে রিভাইজ রুটিনে পরীক্ষা হবে। এটি আর কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজেও চলে যাবে। তোমবা বাড়ি চলে যাও, ভালো করে পড়াশুনা কর।’
এই ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে পরিচালককে ফুল দিয়ে চলে যান।
ফেনী
একই দাবিতে মঙ্গলবার ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ফেনী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শান্ত আলমগীর বলেন, ‘দেশে কায়দা করে সব চলে, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা। বরাবরই দেখি করোনা মহামারি প্রথম ধাক্কাটা শুধু স্কুল-কলেজের ওপর আসছে। অথচ ব্যাংক, বীমা, অফিস, আদালত, গণপরিবহণ, পর্যটনকেন্দ্র, সিনেমা হল, শপিংমল, হাঁট-বাজার সবকিছুই খোলা। চলছে বাণিজ্য মেলা, বিপিএলও। সবখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল।’
‘এ সব কিছুতে যেনো কোথাও করোনা নেই। করোনা ঢুকে বসে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ সব কী উদ্দেশ্যে আমরা জানি না। তবে আমরা চাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হোক। আর যদি চালু করা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে যাবে।’
ইমাম উদ্দিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে অনার্স তৃতীয় বর্ষে। এখন ২০২২ সালে এসেও অনার্স তৃতীয় বর্ষেই আছি। আমরা কখন অনার্স শেষ করব, চাকরি করব? ঘরে আমার বৃদ্ধ মা-বাবা তারা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।’
অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ শারমিন সুলতানা লিজা বলেন, ‘দেশে সব ঠিকঠাক থাকলেও শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার একটা পাঁয়তারা চলছে। দেশে মেলা, খেলা, অফিস-আদালত বিপনীবিতান সব চালু। করোনা মহামারির অজুহাত দেখিয়ে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা শেষ হয়ে যাবে।’