চলতি সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবসে ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজারের সূচক। সপ্তাহের প্রথম দুদিন টানা সূচকের পতন চাঙ্গা পুঁজিবাজারে কুয়াশার আবরণ দিতে শুরু করেছিল। সেখান থেকে মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহে ঘুরল সূচক।
এদিন লেনদেন শুরুর পৌনে এক ঘণ্টায় সূচকের যে উত্থান হয়েছিল তাতে বলা মুশকিল ছিল শেয়ার কেনার বদলে পরবর্তীতে বিক্রিতে মনোযোগ দেবে বিনিয়োগকারীরা। এই সময়ে আগের দিনের তুলনায় ৫৯ পয়েন্ট বাড়ে ডিএসইএক্স সূচক।
বেলা পৌনে ১১টার পর মূলত উত্থানের ধারা কমতে শুরু করে, যা লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে দিন শেষে ১৩ পয়েন্ট উত্থানে শেষ হয়েছে লেনদেন। টানা ৯ কর্মদিবসে ৭ হাজার পয়েন্টে স্থির থেকে মঙ্গলবার সূচক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩২ পয়েন্টে।
চলতি সপ্তাহের রোববার ডিএসইর এই প্রধান সূচক ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট থেকে ৩২ দশমকি ৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ হাজার ৭৩ পয়েন্টে। তারপর দিন সোমবারও সূচক কমেছিল ৫৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। সপ্তাহের দুদিন সূচক কমেছে ৮৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট।
এদিন সূচক উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধি। লেনদেনে এদিন ৭২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। পাশাপাশি দর বৃদ্ধিতে ছিল প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলো। লেনদেনে এ খাতের ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। সিমেন্ট খাতে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির মধ্যে ৫৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
মঙ্গলবার স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭.৪১ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছিল ন্যাশনাল টি কোম্পানির। এ ছাড়া, এইচআর টেক্সটাইলের ৪.৩৪ শতাংশ আর স্টাইল ক্রাফটের ৪.১৪ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪টি কোম্পানির আর দর হারিয়েছে ১৬২টি কোম্পানির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকা লেনদেনেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে ডিএসই। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে যে হাজার কোটি টাকা লেনদেনে সূচনা হয়েছে সেটি ১৫ কর্মদিবস ধরে অব্যাহত আছে।
পুঁজিবাজারে এসএমই কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠন করা আলাদা বোর্ডে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। লেনদেনে ৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে , কমেছে একটি কোম্পানির। এই বোর্ডের প্রধান সূচক ডিএসএমইএক্স ১৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮৮ দশমিক ০৯ পয়েন্টে।
যেসব কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে
মঙ্গলবার সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল আইসিবির ১১ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিসের শেয়ার দর দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩.০২ পয়েন্ট।
হাইডেনবার্গ সিমেন্টের সূচক বৃদ্ধিতে অবদান ছিল ২.৯৫ পয়েন্ট। স্কয়ার টেক্সটাইলের ২.৪৮ পয়েন্ট। বেক্সিমকো লিমিটেডের ২.৪৫ পয়েন্ট।
এ ছাড়া, সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, ইসলামী ব্যাংক, বসুন্ধরা পেপার মিলস, বিএসআরএম স্টিল ও বিএসআরএম লিমিটেড।
অপরদিকে শেয়ারের দর পতনে সূচক কমাতে সহায়ক ছিল বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীনফোন, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, ব্র্যাক ব্যাংক, লিন্ডে বিডি, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকনফার্মা, রেনেটা ও ইউনিক হোটেল।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত বিডি থাই ফুডের। প্রথম দিনের লেনদেন কোম্পানির শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না। শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহী থাকলেও এদিন মাত্র ২৩৪টি শেয়ার হাতবতল হয়েছে।
এ ছাড়া, ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে আর ও একটি কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলের। দর বৃদ্ধিতে ৬৩ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৬৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
এদিন ৯ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে চারটি কোম্পানির। এগুলো হচ্ছে মতিন স্পিনিং, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, কুইন সাউথ টেক্সটাইল ও মালেক স্পিনিং।
হাইডেনবার্গ সিমেন্টের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭১ শতাংশ।
সাত শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে আছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি, হামিদ ফেব্রিক্স ও বসুন্ধরা পেপার মিলস।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
দিনের সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫.৪৭ শতাংশ। এতে ৮৪ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৭৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার দর কমেছে ৫.৩০ শতাংশ। ফার কেমিক্যালের শেয়ার দর কমেছে ৫ শতাংশ।
৪ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে দুটি কোম্পানির। এপেক্সফুড ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির।
তিন শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে আটটি কোম্পানির। এর মধ্যে আছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জিল বাংলা সুগার, অলেম্পিক এক্সেসরিস, দুলামিয়া কটন, এএমসিএল (প্রাণ), শ্যামপুর সুগার, ফুওয়া সিরামিক, সোনালী পেপার ও অনালিমা ইয়ার্ড।
লেনদেনে সেরা ১০
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এদিন কোম্পানিটির ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ২২০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ ছাড়া ফরচুন সুজের ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা শেয়ার লেনদেন হয়েছে। স্কয়ার টেক্সটাইলের ৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার, বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর ২৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার, পাওয়ার গ্রিডের ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ওরিয়ন ফার্মার ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার, এপেক্স ফুটওয়ারের ২১ কোটি ৮১ লাখ টাকার, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২০ কোটি ১৪ লাখ টাক ও এসিআই কোম্পানির ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।