ফেরির ফগ লাইট কেনায় অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ক্যাপ্টেন শওকত সরদারকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
আগাম জামিন চেয়ে তার করা আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জে কে পাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন শাহীন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ফেরির ফগ লাইট কেনায় অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক, জিএমসহ ৭ কর্মকর্তার নামে ৫ জানুয়ারি দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় আসামি করা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল, মহাব্যবস্থাপক বা জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার, মো. নুরুল হুদা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি পঙ্কজ কুমার পাল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) মেকানিক্যাল বিভাগের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং মেসার্স জনী করপোরেশনের মালিক ওমর আলী।
ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার দেখা যায় এমন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট ক্রয়ে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের নামে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও পিএসআই কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে সার্চ অ্যান্ড ফগ লাইটের পরিবর্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সার্চ লাইটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করে সরকারের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন।
অনুমোদনকৃত মামলায় তাদের নামে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিসির ৬ কোটি টাকার ফগ লাইট কিনতে আমেরিকায় যায় প্রতিষ্ঠানটির তখনকার চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পরিচালক জ্ঞান রঞ্জন শীল, জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পংকজ কুমার পাল। এই চার সদস্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মাত্র একজন।
৬ কোটি টাকা দিয়ে তারা ১০টি ফগ লাইট ক্রয় করে, যা ছিল নিম্নমানের। এ ছাড়া দেশে ফিরে গ্রীষ্মকালেই তারা এই (কুয়াশা) ফগ লাইট পরীক্ষা করেছে। মাওয়া-আরিচা ফেরিঘাটে ফগ লাইট পরীক্ষা করার পর দেখা যায়, ৭ হাজার ওয়ার্ডের ফগ লাইট কাজ করছে মাত্র ৩ হাজার ওয়ার্ডের সমান। কিন্তু এর মধ্যে টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনি করপোরেশন। তবে অনিয়ম ধরা পড়ায় আটকে দেয়া হয় ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা।
এরপর ২০১৬ সালে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ফগ লাইট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জনি করপোরেশন। ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে রিটটি খারিজ করে দিয়ে এ রায় দেয় হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।