পিঠজুড়ে বেত্রাঘাতের দাগ। বাদ যায়নি হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য অংশও। খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের শ্রীফলতলা গ্রামে হাফেজিয়া মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে এভাবেই পেটানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার ১১ বছর বয়সী সাব্বির শেখ শ্রীফলতলা গ্রামের মোহাম্মাদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তিন বছর ধরে সে ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। সহপাঠীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করায় গত রোববার তাকে শিক্ষক মেহেদী হাসান বেধম বেত্রাঘাত করেন বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর মেঝোঝিলার রউফ শেখ ও লিপি বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাব্বির।বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সে।
মামলার বাদী ওই শিক্ষার্থীর মা লিপি বেগম মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, সাব্বির রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুরো শরীর ফুলে উঠেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
কিডনি পরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। তার সুষ্ঠ চিকিৎসার জন্য আমরা চিন্তিত। এভাবে শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সাব্বিরের চাচা শেখ অসিকুর রহমান বলেন, ‘পড়া না করে দুষ্টুমি করায় নির্মমভাবে আমার ভাইপোকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা সে অজ্ঞান ছিল। শরীরের পিঠে ও হাতের বাহুতে মোট ৪০টি বেত্রাঘাত রয়েছে। প্রতিটি আঘাতের স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে।’
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. শফিক নিউজবাংলাকে জানান, বেত্রাঘাতের কারণে আগাতের স্থানগুলোতে কালো রক্ত জমাট বেঁধেছে। সাব্বিরের হাত ও মুখ ফুলে গেছে। এ কারণে তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
নির্যাতনের ঘটনায় সোমবার সাব্বিরের মা লিপি বেগম বাদী হয়ে রূপসা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ মামলার এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ।
মাদ্রাসার শিক্ষক মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ‘মামলাটির তদন্তভার পেয়েছি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।’
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগে তার মায়ের লিখিত অভিযোগটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে।
ঘটনার পর থেকে শিক্ষক মেহেদী পলাতক। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইলটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।