উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ওপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ অনেকদিনের। তাদের নানা অভিযোগের মধ্যে একটি হলো, উপাচার্য ক্যাম্পাসের রাস্তায় পেইন্টিং ও দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ করেছেন।
এবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সেই ক্ষোভ দেয়াল লিখন ও পেইন্টিংয়ের মধ্য দিয়েই ফুটিয়ে তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ভবনের দেয়ালে তারা লিখেছেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ভিসি পদ ফাঁকা রয়েছে’। আর মুক্তমঞ্চের দেয়ালে টাঙানো ব্যানারে লেখা, ‘হীরক ভিসির শেষে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের এমন নানা পংক্তি ও উপাচার্যের ব্যাঙ্গচিত্র দেখা গেছে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে।
শুধু উপাচার্যই নয়, এক শিক্ষকের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদও দেখা গেছে দেয়ালে। কোথাও লেখা, ‘চাষাভূষার এই ক্যাম্পাসে আর কত?’, কোথাও লেখা, ‘আমরা সবাই সাস্টিয়ান, চাষাভূষার সন্তান’।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এক দেয়ালে লেখা হয়েছে, ‘ফুলের বিরুদ্ধে বুলেট হলে বুলেটের বিরুদ্ধে কী?’
আন্দোলনকারী সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ অহিংস পন্থায় আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অনশন-অবস্থানের মাধ্যমে আমাদের দাবি জানাচ্ছি।
‘প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা দেয়াল লিখন ও ব্যাঙ্গচিত্র আঁকছি। সড়কে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান লিখছি। সব মিলিয়ে দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যতকিছু করা যায় সবকিছু করছি আমরা। পুরো ক্যাম্পাসে ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে চাই।’
আন্দোলনরত সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগে যে কোনো উপলক্ষে ক্যাম্পাসের সড়কে আলপনা আঁকতাম। এই উপাচার্য তা বন্ধ করে দিয়েছেন। সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। সড়কে ও দেয়ালে আঁকাআঁকির মাধ্যমে আমরা এসবেরও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তবে এই দেয়াল লিখনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নাখোশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ থেকে যে আন্দোলন করছেন তাতে আমার দ্বিমত নেই। তবে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো দেয়াল নষ্ট করে ফেলছেন। এই আন্দোলনের পর যিনিই উপাচার্য থাকুন না কেন, সবগুলো দেয়াল আবার নতুন করে রং করাতে হবে।’
এদিকে, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার রাতেও ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পদত্যাগের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অনশনে অংশ নেয়া ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৮ জন উপাচার্য ভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবস্থাও অবনতির দিকে। তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় তারা।
শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপুর্ব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এতগুলো শিক্ষার্থীর জীবন সংকটাপন্ন, তবুও উপাচার্য তার চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন। সবার জীবনের চাইতে তার কাছে চেয়ারের গুরুত্ব বেশি। আমরাও তার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত অনশন থেকে উঠব না।’