সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সোমবারও বিক্ষোভ হয়েছে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে এতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। শাবি উপাচার্যের নির্দেশে এই ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ।
নিজ বাসায় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের জন্য সোমবার খাবার নিয়ে হাজির হন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
ঢাবিতে মশাল মিছিল
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন।
সোমবার সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এ মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, রাজু ভাস্কর্য হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
এর আগে বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন কয়েকটি ছাত্র সংগঠন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক রেজোয়ানুল হক মুক্ত বলেন, শাবিপ্রবিতে বীরত্বপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সমর্থন আছে, শুধু সমর্থনই নয় সিলেটের আন্দোলন সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মুক্ত বলেন, আমরা মনে করি ছাত্ররা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন করছে তা ইতোমধ্যে নৈতিকভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন ভিসি এখনো পদত্যাগ করছেন না। তাই আমরা অবিলম্বে এই মেরুদণ্ডহীন ভিসিকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ তাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছে; তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছে। কিন্তু এ দাবি বাস্তবায়নের কাজে যারা নিয়োজিত তারা হাসি তামাশা করছেন। ছাত্রদের এই ন্যায়সংগত দাবি কীভাবে ভূলুণ্ঠিত করা যায়, সেটা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘শাবিপ্রবির দুর্নীতি ও হামলাবাজ উপাচার্যের এখনই পদত্যাগ দাবি করছি। যারা উপাচার্যের পক্ষে কথা বলবে তারা তার দালাল, ফ্যাসিবাদের দালাল, অগণতান্ত্রিকতার দালাল।’
ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকার কথা না থাকলেও কিন্তু শাবিতে পুলিশ প্রবেশ করেছে। এর আগেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আন্দোলন হয়েছে; উপাচার্যরা তালাবদ্ধ হয়েছেন কিন্তু পুলিশ আসেনি, লাঠিচার্জ হয়নি। কিন্তু এবার তা হয়েছে। আমরা এই হামলাবাজ উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’
তিনি বলেন, ‘শাবিপ্রবির ছাত্রদের সমর্থনে আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন যেমন চলছে সামনের দিনেও ছাত্রদের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রগতিশীল সংগঠন তাদের পাশে থাকবে।’
রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীপক রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি জহরলাল রায়, বাংলাদেশ ছাত্র কাউন্সিল এর সহসভাপতি সায়েদুল হক নিশান,সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুহায়েল আহমেদ শুভ ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সোহবত শোভন।
রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি
উপাচার্য পদে থাকার জন্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের নৈতিক অধিকার নেই উল্লেখ করে খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এহেন বর্বর হামলায় মদদ দেয়ার পর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উপাচার্য হিসেবে থাকার আর কোন নৈতিক অধিকার নেই বলে আমরা মনে করি।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
সোমবার দুপুরে খোলা চিঠি জমা দিতে জোটের তিন প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসভবনে যান।
এই প্রতিনিধিরা হলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহাইল আহমেদ শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরফাত সাদ এবং ছাত্র ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা।
এর আগে জোটের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে তাদের বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভ শেষে জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতীকী অনশন কর্মসূচি চলাকালীন এ খোলা চিঠি পাঠ করেন।
চিঠিতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুত্রপাত এবং আন্দোলনের বর্তমান অবস্থার সার্বিক দিক তুলে ধরা হয়।
রাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা, শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরে, প্রশাসন চুপ কেনো, শাবিপ্রবি নির্লজ্জ ভিসির অপসারন চাই, শিক্ষার্থীরা এক হও, অধিকার আদায় করো- সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছে। ক্যম্পাসের স্বৈরাচারী কাঠামো ভাঙতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন নারী বিদ্বেষী, দালাল, স্বজনপ্রীতি, রক্ত পিপাসু হামলাকারী ভিসিকে শিক্ষার্থীরা আর চায় না। এমন ভিসির ক্যাম্পাসে জায়গা হবে না। শুধু পদত্যাগ নয়, এমন নজির রাখতে হবে যেনো সারাজীবন এটি শিক্ষনীয় হয়ে থাকে।’
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুর মজিদ অন্তর বলেন, ‘আজ প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত অবহেলার শিকার হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্চিত হচ্ছে, প্রশাসন কর্তৃক মারধরের শিকার হচ্ছে, মামলা হামলার শিকার হচ্ছে। যে শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখা হয়, আজকে সেই শিক্ষার্থীদেরকে মেরুদ-হীন করার জন্য একের পর নির্যাতন চালানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর।
‘শিক্ষার্থী সমাজের বিরুদ্ধে লেগে জাতি কখনোই ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি। শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করুন। নির্লজ্জ বেহায়া ভিসিকে অপসারণ করুন।’
এসময় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি তোলেন।
দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে শাবিপ্রবির স্বৈরাচারী ভিসিকে অপসারণ করতে হবে, তিনি যেভাবে নির্লজ্জভাবে হামলা চালিয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে সে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, একই সঙ্গে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করার জন্য ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে, পূর্নাঙ্গভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রতিনিধি নিশ্চিত করে সিনেট কার্যকর করতে হবে। যদি এর কোন সুরাহা না করা হয়, তাহলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি আরও বক্তব্য দেন আমানউল্লাহ আমান, নাঈম, রাকিব, সাকলাইন গৌরব ও মেহেদী হাসান মুন্না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বরিশালে মশাল মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার সন্ধ্যার পর নগরীতে এই মিছিল করা হয়।
নাজির মহল্লা এলাকা থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন বিএম কলেজ শাখার সভাপতি কিশোর কুমার বালা, ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মো. জাবের, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল জেলা সংগঠক হুজাইফা রহমান, রাকিব মাহামুদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক সুজয় শুভ, কবি ছোটন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সুমাইয়া আরেফিন।
মশাল মিছিলে শাবিপ্রবি ভিসি বিরোধী নানা শ্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা।
মিছিল শেষে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সুজয় শুভ বলেন, ‘শাবিপ্রবির ভিসিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং নারীদের নিয়ে উনি যে উক্তি করেছেন সে কারণে তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা রেখে আমরাও কঠোর আন্দোলনে যাবো প্রয়োজন হলে।’
শাবিতে তৃতীয় পক্ষের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ শাবির আন্দোলনে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ।
সমিতি বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
একটি বিশেষ মহল এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলেও প্রতীয়মান হয়েছে দাবি শিক্ষক সমিতির।
সোমবার বিকেলে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের বলপ্রয়োগের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ওই হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলনকে পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনের এই রূপান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের দাবি করে এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করে শিক্ষক সমিতি।
উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অমানবিক উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক এবং শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মাত্রা যুক্ত করেছে।
শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়।
প্রেক্ষাপট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
এদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে সন্ধ্যায় অ্যাকশনে যায় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, ভিসির নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
এই বিক্ষোভের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে রোববার রাত থেকেই আন্দোলন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও এসে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিকল্প বিদ্যুতে রাত পার শাবি উপাচার্যের
আন্দোলনের একপর্যায়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থায় রোববার রাত পার করেছেন তিনি।
তবে ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য ভবনে কারো যাতায়াত লক্ষ করা যায়নি। বিদ্যুৎ-পানির সমস্যার কথা জানিয়ে উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াও আসেনি।
বিদ্যুৎ-পানিবিহীন রাত কেমন কেটেছে তা জানতে সোমবার সকালে উপাচার্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।