প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনে গ্রিন ট্রান্সফরমেশনকে (সবুজ রূপান্তর) সক্ষম করে তুলতে পাঁচটি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির পূর্বাভাস দিয়েছে টেলিনর। আগামী দিনের প্রযুক্তি খাতে পরিবর্তন নিয়ে টেলিনরের ‘টেক ট্রেন্ডস ২০২২’ প্রতিবেদনে এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর বারিধারায় জিপি হাউজে সোমবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টেলিনরের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফল প্রকাশ করে গ্রামীণফোন। টেলিনর গ্রুপের সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইউনিট ‘টেলিনর রিসার্চ’ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণালব্ধ এসব পূর্বাভাস দিয়েছে।
টেলিনর বলছে- দ্রুতই গ্রিন ক্লাউডের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, জলবায়ু বিষয়ে মাইক্রো ডিগ্রির চাহিদা বাড়বে, সবকিছুর অপটিমাইজেশন বা সর্বোত্তম ব্যবহার গুরুত্ব পাবে, সবুজায়ন বিষয়ে আন্দোলন বা গ্রিন-ইনফ্লুয়েন্সার কর্মকাণ্ড বাড়বে এবং ‘লস্ট জেনারেশন’ বা পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী অফিস ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। আর কোম্পানিগুলো এই খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ; বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
টেলিনরের পূর্বাভাস তুলে ধরে টেলিনর রিসার্চের প্রধান বিওন তালে স্যান্ডবার্গ ভার্চুয়ালি মূল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন- নতুন যুগের উন্নত কানেক্টিভিটি, জলবায়ু-বান্ধব শক্তি-সাশ্রয়ী আধুনিক হার্ডওয়্যার, এজ ক্লাউড ও ফাইভ-জি প্রযুক্তি আরো পরিবেশ-বান্ধব হবে। তা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রিন জব স্কিলসের চাহিদা এবং ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্লাইমেট মাইক্রো ডিগ্রি দেয়ার বিষয়গুলোকে বাড়িয়ে তুলবে।
একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শক্তি-সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব ডিভাইস তৈরির প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা বাড়বে। তরুণদের মাঝে সামাজিক মাধ্যমে জলবায়ু সচেতন ইনফ্লুয়েন্সারের সংখ্যা ও জনপ্রিয়তা বাড়বে। কারণ, সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রশমনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জলবায়ু বিষয়ক সচেতন ব্যক্তিদের প্রত্যাশা পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী প্রজন্মের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ‘গ্রেট রেসিগনেশন’-এর সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো এবং বৈশ্বিক মহামারি শেষে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে এ ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
‘সার্ভার ও অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক কোনো কিছুর ডিজাইন করার সময় সবুজায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে ব্যবহারকারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে এগুলোর প্রয়োগ ঘটাতে পারে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়গুলোকে মূল পাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রযুক্তি অনুসারে আমরা সারা দেশে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ল্যাব এবং ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমিসহ অনেক ডিজিটাল অবকাঠামো ও সেবা চালু করেছি। এছাড়াও তরুণদের জন্য, বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নির্মাণ করা হচ্ছে।’
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়ছে। পরিবেশ-বান্ধব পদক্ষেপের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেনিং সেন্টারকে ক্লাইমেট মাইক্রো ডিগ্রি ও কোর্সের ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করা যায় কোর্সগুলোর মাধ্যমে মানুষ তা শিখতে পারবে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ তার বক্তব্যে চারটি বিষয়ে আলোকপাত করেন। বিষয়গুলো হলো- জ্বালানি সাশ্রয়, সাইট লেভেল ইনোভেশন, আরএএন (রেডিও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক) ও নেটওয়ার্ক ইক্যুইপমেন্ট ইনোভেশন এবং উন্নত নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা ও অপটিমাইজেশন।
তিনি বলেন, ‘টেক ট্রেন্ডস থেকে প্রাপ্ত ফল নিয়ে কাজ করতে কিংবা এগুলোর বিকাশে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায় তা নিয়ে কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। আমরা ফাইভ-জি নীতিমালা নিয়ে কাজ করছি। অপারেটরদের পরামর্শও নিচ্ছি।’
কামাল কাদীর বলেন, ‘সার্ভার ও অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক কোনো কিছুর ডিজাইন করার সময় সবুজায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে ব্যবহারকারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে এগুলোর প্রয়োগ ঘটাতে পারে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়গুলোকে মূল পাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ই-বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে মানুষ সঠিকভাবে জানে না। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ডিজাইন বাজারে আনার চেয়ে পরিবেশ রক্ষায় পণ্যের স্থায়িত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নেটওয়ার্ক টাওয়ারের বিকিরণ যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ না হয় সে ব্যাপারে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন হতে হবে।’
ইয়াসির আজমান বলেন, ‘চরম জলবায়ুজনিত বিভিন্ন সমস্যা আমাদের টেকসই অর্থনীতির লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত করছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, জলবায়ু-বান্ধব কৌশল গ্রহণ করা, যা সবুজে রূপান্তরের মাধ্যমে ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখবে।
‘এ বছর প্রযুক্তি সংক্রান্ত অনুমান দেখিয়েছে, কিভাবে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশন ডেটা স্থানান্তরকে আরো দক্ষ, সহজ এবং ডিভাইসগুলোকে আরও পরিবেশবান্ধব ও অপটিমাইজ করে তুলবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল মাইক্রো ডিগ্রি ও গ্রিন ইনফ্লুয়েন্সারগুলোর মাধ্যমে জলবায়ুতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ভাল নেতৃত্বের অনুশীলনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কর্মীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে পারে।’