দুই পায়ে জখম অবস্থায় হাসপাতালের সামনে পড়েছিলেন। দুরবস্থা দেখে এক ব্যক্তি ভর্তি করান হাসপাতালে। এর পর থেকে হাসপাতালের মেঝেই পড়ে আছেন তিনি।
নাম-পরিচয় কেউ জানে না। কবে সুস্থ হবেন, তাও সঠিক করে বলতে পারেন না হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের।
প্রায় তিন মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তি। তবে তিনি কোনো নড়াচড়া করতে পারেন না। বাকশক্তিও নেই।
অর্থোপেডিক ইউনিটের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাহিদা সুলতানা সোমবার দুপুরে জানান, কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পায়ে আঘাত পান তিনি। প্রায় অচেতন অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর দেখা যায় তিনি কথাও বলতে পারেন না। এর পর থেকে এখানেই চিকিৎসাধীন। আজ পর্যন্ত কেউ তার খোঁজ নিতেও আসেনি।
অর্থোপেডিক ইউনিটের রোগীর ফাইল দেখে জানা যায়, গত বছরের ২ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আহত ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির কারণ হিসেবে দেখানো হয় দুই পায়ে গুরুতর জখম।
ওই ফাইলে রোগীকে ভর্তি করানো ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মামুন ইসলাম। বাড়ি দুপচাঁচিয়া উপজেলায়।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে মামুন জানান, এক স্বজনের চিকিৎসার ব্যাপারে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল হাসপাতালে এসেছিলেন। ফেরার সময় হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। গুরুতর হলেও কোনো নাম-পরিচয় না থাকায় তাকে ভর্তি নেয়া হচ্ছিল না।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে দেখে খারাপ লাগছিল। এ জন্য আমি নিজে তাকে ভর্তি করাই। কিন্তু তাকে কেউ চেনে না। কে হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখেছিল, তাও কেউ বলতে পারেনি ওই সময়।’
হাসপাতালের ডিউটিরত নার্সরা জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ওই রোগীকে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যারা দেখাশোনা করেন।
দুপুরে ওই ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়, বারান্দার মেঝেতে ওই রোগী শুয়ে আছেন। পুরো শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা। বিছানার এক পাশে প্রস্রাবের ক্যাথেটার ব্যাগ দেয়া আছে। মাথার কাছে খাবার বাটি ও পানির বোতল।
রোগীটি মুখ হা করে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। জিজ্ঞেস করা হলেও কোনো সাড়া শব্দ দেন না।
ওয়ার্ডে মো. মনছুর নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সাত মাস ধরে হাসপাতালে আছেন। এ ছাড়া এখানে আসা রোগীদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। বেশির ভাগ সময় ওই রোগীর দেখাশোনা করেন মনছুর।
সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, ‘তিন মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও এমন ঘটনা আমাদের কেউ জানায়নি। আমি আগামীকাল এই রোগীর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা করব।’
তিনি জানান, লোকটি পাগলপ্রকৃতির। কোনো নড়াচড়া করতে পারেন না। খাবার দিয়ে রাখলে নিজে থেকে খান। মাঝেমধ্যে পানি দিয়ে গা মুছে দিই। কাপড় বদলিয়ে দিই। এর আগে একবার ওয়ার্ডের সবাই টাকা তুলে তার ওষুধ কিনেছিলাম।
অজ্ঞাত রোগীর বিষয়ে ছিলিমপুর মেডিক্যাল ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজ্জাকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে আসার আগে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়। এ ধরনের রোগীর বিষয়ে খোঁজখবর রাখে হাসপাতালের সমাজসেবা দপ্তর।’
অজ্ঞাতপরিচয় রোগীর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন জানান, ‘অজ্ঞাতপরিচয় রোগীদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।
‘সে ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে তাকে পুনর্বাসন করতে হয়। এ কাজটি করে থাকে পুলিশ প্রশাসন। এর আগে কয়েকজনকে এভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আর আমরা এসব কাজে সহায়তা করে থাকি।’
এই সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, ‘তিন মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও এমন ঘটনা আমাদের কেউ জানায়নি। আমি আগামীকাল এই রোগীর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা করব।’
হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও অর্থো সার্জারি বিশেষজ্ঞ রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, ‘ওই রোগীকে দেখেছি। তার শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তার নাম-পরিচয়, ঠিকানা কিছু নেই। এ ধরনের রোগীকে পুনর্বাসন অতি প্রয়োজন। আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।’