বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান রুপার উত্থান যেভাবে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:২৯

টেলিভিশনে রুপার গ্রেপ্তারের খবর দেখার পর নিজ গ্রাম দুপচাঁচিয়ার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভুঁইপুরসহ বিভিন্ন মহলে তার উত্থান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার আলোচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহবুবা নাসরিন রুপাকে দলীয় পদ ও সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রুপাকে গ্রেপ্তারের পর তার চক্রের ১০ জনকে দুই দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

টেলিভিশনে রুপার গ্রেপ্তারের খবর দেখার পর নিজ গ্রাম দুপচাঁচিয়ার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভুঁইপুরসহ বিভিন্ন মহলে তার উত্থান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ রুপার গ্রেপ্তারে হতাশা প্রকাশ করলেও আরেকটি অংশ তাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ আখ্যায়িত করেছেন।

অনেকেই অভিযোগ করছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়ায় তার মধ্যে এক ধরনের দাম্ভিকতা তৈরি হয়েছিল।

জনপ্রতিনিধি হয়েও বছর তিনেক ধরে সরকারি-বেসরকারি অন্তত আট প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন ফাঁসে তিনি জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবনেই তার এই অপরাধপ্রবণতা শুরু হয়েছিল।

এ ছাড়া দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে নানা ধরনের তদবির বাণিজ্যও করতেন তিনি। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করতেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে হঠাৎ করেই বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নেন। তারপর থেকেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাব ও অপরাধ চক্রে জড়িয়ে দ্রুত টাকা কামাতে চেয়েছিলেন।

গত তিন বছরে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন রুপা

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মজিবর রহমান মজনু জানান, গ্রেপ্তার হওয়া রুপার সকল সদস্য পদ স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।

নিজ গ্রামেই ছিলেন অপরিচিত

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভুঁইপুর গ্রামে মাহবুবা নাসরিন রুপার বাড়ি।

নিজ গ্রামের অনেকেই দাবি করেছেন, কিছুদিন আগেও রুপাকে তারা চিনতেন না। ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তার পরিচিতি বাড়তে শুরু করে।

গ্রামের মানুষেরা জানান, বেশির ভাগ সময় ঢাকাতেই থাকেন রুপা। অত্যন্ত বিনয়ী রুপাকে তারা ভালো মেয়ে হিসেবেই জানেন।

সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে একবার গ্রামে গিয়েছিলেন তিনি।

রুপার বড় চাচা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ছোট ভাই আতোয়ার হোসেনের ৩ সন্তানের মধ্যে সবার বড় রুপা। তার ছোট বোন শিউলির বিয়ে হয়েছে এবং ছোট ভাই পড়াশোনা করছে।

রুপার বাবা আতোয়ার হোসেন ১৯৮০ সালের আগেই গ্রাম ছেড়েছেন। প্রথমে তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা সদরে পানের দোকান দেন। সেখানেই রুপার জন্ম হয় এবং স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে তিনি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

এরপরই রুপার বাবা পরিবার নিয়ে ঢাকায় পা রাখেন এবং আজিমপুর গার্লস স্কুলে নৈশপ্রহরীর চাকরি নেন। সেখানেই রুপার অন্য দুই ভাইবোনের জন্ম হয়। তিন ভাইবোনই ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন। ইডেন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন রুপা।

রুপার চাচা জানান, প্রায় ৫ বছর আগে রুপার মা আঞ্জুয়ারার মৃত্যু হয়। আর ৩ বছর আগে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন রুপা। দীর্ঘদিন নিজ এলাকা ও গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও এলাকাবাসী তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। নির্বাচনের ৫ দিনের মাথায় তার বাবার মৃত্যু হয়।

রুপার গ্রেপ্তারের খবরে তার বড় চাচা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে রুপা গ্রামে এসেছিল। তখন সে বলছিল তার নিয়োগ পরীক্ষা আছে। আমরা জানতাম, সে একটা চাকরির চেষ্টা করছে। কিন্তু কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।’

চাকরি ও প্রশ্নফাঁস

দুপচাঁচিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক নেতা আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘আমরা রুপাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য বলছিলাম। কিন্তু সে বলছিল, আগে চাকরি, তারপর বিয়ে।’

মোত্তালেব মনে করেন, রুপা নিজে চাকরি নেয়ার পাশাপাশি অন্যদের সহযোগিতা করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আরও পাঁচ থেকে ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে একাধিক জায়গায় অভিযানও চলছে। তবে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই মিনিটের মধ্যে তারা প্রশ্ন ফাঁস করতেন- তা আমাদের বিস্মিত করেছে।’

তিনি জানান, কানের ভেতর ছোট্ট একটি ডিভাইস এমনভাবে রাখা হতো, যা বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় ছিল না। প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার্থী সেজে হলে ঢুকে বিশেষ আরেক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র হলের বাইরে চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠাতেন। পরে প্রশ্ন সমাধান করে হলের ভেতরে পৌঁছে দিতেন।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ১০ জনের বাইরে চক্রের আরও যাদের নাম আসছে, তাদের মধ্যে একজন রেলওয়ের কর্মচারীও রয়েছেন। এমনকি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) এক কর্মচারীর নামও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খলিল নামে একজন এই সিন্ডিকেটে যুক্ত। খলিল একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত কর্মী।

গত শুক্রবার প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে রুপাসহ অন্যদের ওই দিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তার অন্য ৯ জন হলেন হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের বরখাস্ত সহকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল-আমিন রনি, নোমান সিদ্দিকী, নাহিদ হাসান, তানজির আহমেদ, শহীদ উল্লাহ, রাজু আহমেদ, রাকিবুল হাসান ও হাসিবুল হাসান।

এ বিভাগের আরো খবর