নিজ বাসায় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের জন্য খাবার নিয়ে গিয়েও ফিরে আসতে হলো প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে উপাচার্যের বাসায় ঢুকতে দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যায় কয়েকজন শিক্ষক খাবার নিয়ে আসেন।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনে রোববার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। অবশ্য পরে বিকল্প ব্যবস্থায় তার বাসায় বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়।
প্রক্টর উপাচার্যের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় উপাচার্য ভবনের সামনের ফটকে শুয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের বাধায় উপাচার্যের বাসায় যেতে না পেরে ফটকের সামনেই প্রক্টর আলমগীর কবীর বলেন, ‘উপাচার্য বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন অবস্থায় আছেন। তিনি অসুস্থ। আমরা মানবিক দায়িত্ব থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। শিক্ষার্থীদের জন্যও আমরা খাবার নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাদের অনুরোধ রাখেনি। ফলে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি।’
শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে অনশন করছি, অনেকে মৃত্যুপথযাত্রী। অথচ স্যারেরা আমাদের কথা না ভেবে উপাচার্যের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। এতে বোঝা যায় শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনশন করছে। তাদের জন্য আমাদের খারাপ লাগছে। তাদের সমবেদনা জানাতেও এসেছি। তাদের যে দাবি সেটি সম্পূর্ণ সরকারের বিবেচনার বিষয়। কোনো দাবি আদায়ের জন্য কারো খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া অনুচিত।’
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে অনশন করছি, অনেকে মৃত্যুপথযাত্রী। অথচ স্যারেরা আমাদের কথা না ভেবে উপাচার্যের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। এতে বোঝা যায় শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই।’
এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর।
তারাও শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে উপাচার্যকে খাবার পৌঁছে দিতে পারেননি। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্যও খাবার নিয়ে এসেছিলেন এই দুই কাউন্সিলর। তবে এই খাবারও গ্রহণ করেননি শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের জন্য সোমবার বেলা ২টার দিক খাবার নিয়ে আসেন সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান। করপোরেশনের এই দুই ওয়ার্ডের পাশেই শাবি ক্যাম্পাস।
শাবিতে এসে মখলিসুর রহমান কামরান ও ইলিয়াসুর রহমান ৫ প্যাকেট খাবার নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের উপাচার্য ভবনে প্রবেশ করতে দেননি।
এরপর তারা দুজন অনশনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের জন্য আনা খাবার গ্রহণের অনুরোধ জানান। তবে আন্দোলনকারীরা এই খাবার গ্রহণ করেননি।
কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান বলেন, ‘উপাচার্যের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ কাল বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তিনি কীভাবে আছেন তা দেখতে এসেছিলাম। তার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম। তবে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে বাসভবনের ভেতরে না যেতে অনুরোধ করেছেন।’
কামরান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্যও আমরা খাবার নিয়ে এসেছিলাম। তবে তারা নেননি।’
কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম। তবে তারা গ্রহণ করেননি। তারা অনুরোধ করে বলেন, সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থী ছাড়া কারও কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারছি না।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করার ঘটনায় নিন্দা জানান কাউন্সিলররা।
অনশন করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ২০ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের খাবার দেয়া হলেও তা গ্রহণ না করে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই খাবার পথশিশুদের মধ্যে বিতরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘১৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৬ জানুয়ারি তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে। এর পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন।’
আন্দোলনে বহিরাগতরা আছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এর পরেও আমরা গেটে শিক্ষার্থী রেখেছি। পরিচয়পত্র দেখে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেব।’