বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ফুলচানের মাও মারা গিয়েছিলেন ট্রেনে কাটা পড়ে’

  •    
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:০০

প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুটা ছেলেকে পড়ালেখা করানো আর সংসার খরচ চালিয়ে বাড়িটা করতে পারেনি শেহের আলী। কোনো রকমে থাকত। ওই ছিল পরিবারটার একমাত্র উপার্জনক্ষম, এখন পরিবারটা অথৈ সাগরে পড়ে গেল। ছেলে দুটাও আয় উপার্জন করা শিখেনি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি আলিনগর ভুত পুকুর মহল্লায়। ফুলচান ও শেহের আলী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মৃত্যুতে পাড়াজুড়েই শোক।

ফুলচানের বাড়িতে সোমবার গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের কান্নায় ভারী পরিবেশ। পাড়াপ্রতিবেশীরা ফুলচানের স্ত্রী সুফিয়া বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। প্রলাপ করে বলছেন ‘মাও ট্রেনে কাটা পড়েছিল, ব্যাটাও ট্রেনে কাটা পড়েই মারা গেলে।’

ফুলচানের চাচাতো ভাই কেতাবুল জানান, ফুলচানের মা জোলেশান বেগম ১৯৯৩ সালের দিকে গরু আনতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। তারপর ফুলচানরা অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে।

ফুলচানের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে নাসরিন খাতুনের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে হাবিবুর রহমান সাগর ও আতাউর রহমান নয়ন সবেমাত্র আয়-উপার্জন করা শুরু করেছে। ফুলচান মাছ ধরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই সংসার চালাতেন।

ফুলচানের ভাতিজা শেহের আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যায় ডিম বিক্রি করতেন। শেহের আলীরও তিন সন্তান। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

বড় ছেলে মেহেদী হাসান এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, ছোট ছেলে জায়েদ হাসান এবার এসএসসি পাস করেছে।

জাহেদ হাসান বলেন, ‘আব্বা বাসস্ট্যান্ডে ডিম বিক্রি করেই আমাদের সংসার চালাত। মাঝেমধ্যে রাতে মাছ ধরতে যেত। গতকাল মাছ ধরতে গেছিলো। হামরা দুই ভাইকে পড়তে কহিত সব সময়ই। কহিত পড়ালেখা কর, যা টাকাপয়সা লাগবে ওটা লিয়্যা তোরা ভাবিস না, তোরা ভালো করা পড়।’

প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুটা ছেলেকে পড়ালেখা করানো আর সংসার খরচ চালিয়ে বাড়িটা করতে পারেনি শেহের আলী। কোনো রকমে থাকত। ওই ছিল পরিবারটার একমাত্র উপার্জনক্ষম, এখন পরিবারটা অথৈ সাগরে পড়ে গেল। ছেলে দুটাও আয়-উপার্জন করা শিখেনি।’

রেলক্রসিং, তবু নেই গেটম্যান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ–রাজশাহী রেলপথে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন পার হতেই আলিনগর উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় প্রথম রেলক্রসিং। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ পথ দিয়ে ট্রাক-বাসসহ অন্য যানবাহন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে।

এই ক্রসিং পার হয়ে কিছু দূরেই হাজির মোড়। সেখানেও ভুত পুকুর গ্রামসহ আশপাশের জনপদে যাওয়ার পাকা সড়ক। হাজির মোড়েও ব্যস্ততা কম নয়। সেখান দিয়ে বাস-ট্রাক না চললেও অটোসহ বিভিন্ন যানবাহন রেলপথের ওপর দিয়ে পার হয়।

হাজির মোড় এলাকায় রেলক্রসিংয়ে রেলের গেট ও গেটম্যান দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এসআই জাফর নামে একজন বলেন, ‘আলীনগর ভুত পুকুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচল এই রেলক্রসিং দিয়ে। কিন্তু এখানে কোনো গেটম্যান নেই। এর আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

অরক্ষিত এই রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। ছবি: নিউজবাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শহিদুল আলম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের আওতার মধ্যে দুটি ক্রসিংয়ের একটি স্টেশন মাস্টার নিয়ন্ত্রণ করে, হাজির মোড় ক্রসিংটি অরক্ষিত। এসব ক্রসিংয়ের দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল শাখার।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা যে স্থানে ঘটেছে সেখানে অবশ্যই রেলের গেট থাকা দরকার ছিল। আমি বিষয়টি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, যেন হাজির মোড়ে রেলের গেট দেয়া হয়।’

আলিনগরে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে এদিন সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে ভটভটির চালকসহ তিনজন নিহত হন।

এ বিভাগের আরো খবর