হাতের স্পর্শ ছাড়া কলা খেয়ে ও দ্রুততম সময়ে দশটি মাস্ক পড়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার নাফিস ইসতে তৌফিক ওরফে অন্ত। ৩০.৭ সেকেন্ডে হাতের ব্যবহার ছাড়াই মুখ দিয়ে কলা ছিলে খেয়ে এবং ৭.১৬ সেকেন্ডে সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধান করে এ কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুক কর্তৃপক্ষ বুধবার তাকে এ অর্জনের স্বীকৃতি দিয়েছে।
এর আগে দ্রুততম সময়ে (৭.৩৫ সেকেন্ড) মাস্ক পড়ার রেকর্ডটি যুক্তরাষ্ট্রের জল পিলের এবং কলা খাওয়ার রেকর্ডটি (৩৭.৭ সেকেন্ড) কানাডার মাইক জ্যাকের দখলে ছিল।
সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র অন্তু। বাবা ইউসুফ আলী একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী ও মা নাজমুন নাহার গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় তিনি। এই অর্জনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি অভিভূত তার সহপাঠীরাও।
২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেন অন্তু। ১৪ জুলাই ভিডিও পাঠানোর পর ৬ নভেম্বর তা গৃহীত হয়। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুক কর্তৃপক্ষ ১৯ ডিসেম্বর তাকে এ অর্জনের স্বীকৃতি দেয়।
করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে সারাক্ষণ বন্দি ছিলেন অন্তু। তখন থেকেই তার এ রেকর্ডের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। এর আগে তিনি স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে দীর্ঘ চেইন তৈরি এবং হাতে পেন্সিল নিয়ে ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চেয়েছিলেন।
বলেন, ‘এর আগে স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে দীর্ঘ চেইন তৈরি এবং হাতে পেন্সিল নিয়ে ব্যালেন্স তৈরির উপর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হই। তারপরও থেমে থাকিনি। এরপর দ্রুততম সময়ে মাস্ক পড়া এবং হাতের স্পর্শ ছাড়াই কলা ছিলে খাওয়ার উপর আবেদন করলে সেটিতে সফল হই।
নিজের এমন কৃতিত্বের জন্য নিজের পরিবারের পাশাপাশি সহপাঠী এবং শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অন্তু বলেন, ‘এ জন্য আমি আমার বাবা-মা, সহপাঠী এবং শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তারা আমাকে উৎসাহ ও সহযোগীতা করেছিল।’
তার এ স্বীকৃতিতে গর্বিত পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীরা।
বন্ধু আতাহার শিহাব বলেন, ‘সব সময় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহ ছিল তার। করোনাকালে স্কুল বন্ধের সময় বেশির ভাগ সময়ে উদ্ভাবনী নানা কাজে সময় দিয়েছে সে। তার সাথে আমি প্রত্যক্ষভাবে পাশে ছিলাম।’
একমাত্র বোন একই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ফারিহা তাবাসসুম বলেন, ‘ভাইয়া পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে দ্রুততম সময়ে হাতের স্পর্শ ছাড়া কলা খাওয়া এবং মাস্ক পড়ার ব্যাপারে অনেক অনুশীলন করেছে। তার চেষ্টা সফল হয়েছে।
‘বিশ্বের অনেক রেকর্ডের মধ্যে একজন ছাত্র সৈয়দপুরে রয়েছে এবং সে আমার ভাই এ নিয়ে আমার গর্ববোধ হচ্ছে।’
বাবা ইউসুফ আলী বলেন, ‘এটি চিন্তায় ছিল না, আমার ছেলে বিশ্বে নাম লিখাবে। সে অনেক চেষ্টা করেছে, যার ফল পেয়েছে। বাড়িতে থাকলে সারাদিনই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকতো সে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে নানা উদ্ভাবনী কাজ করত। সে প্রকৌশলী হতে চায়।
‘এর আগে চেইন বানানো এবং পেন্সিল দিয়ে ব্যালেন্স তৈরি করার উপর অনুশীলন করলেও সফল হতে পারেনি। কিন্তু পিছিয়ে থাকেনি; তার চেষ্টা তাকে এগিয়ে নিয়েছে।’
মা নাজমুন নাহার ছেলের সফলতায় খুশি হলেও তিনি চান ছেলে একজন ভালো মানুষ হোক। বলেন, ‘একটি ছেলে আমার। সে যেন ভালো কিছু করে।’
সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২১ সালে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার এটি। আমরা সবাই গর্বিত। এটি সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
তার এই স্বীকৃতি দৃষ্টান্ত হিসেবে রাখতে প্রতিষ্ঠানটির প্রদর্শনী বোর্ডে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।