শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে ক্লাস বন্ধ ছাড়া দৃশ্যত আর কোনো বিধিনিষেধ যখন কাজ করছে না তখন বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার কথা জানিয়েছে সরকার। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা আসতে যাচ্ছে সেটি জানানো হয়নি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সোমবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নতুন বিধিনিষেধ জারির বিষয়ে কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ আরও দীর্ঘায়িত হবে কি না। ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাড়ানো হতে পারে। কারণ আমাদের সচেতনতার উপরে...'
করোনার দুটি ঢেউয়ে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির পর এবার আঘাত হেনেছে তৃতীয় ঢেউ। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও আক্রান্ত দৈনিক ছাড়িয়েছে ১০ হাজার। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ।
তৃতীয় ঢেউয়ের লক্ষণ যখন স্পষ্ট তখন ১৩ জানুয়ারি সরকার জারি করে ১১ দফা বিধিনিষেধ। দেয়া হয় গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞা, গণপরিবহনে যাত্রী অর্ধেক। যদিও পরে ট্রেন ছাড়া অন্য যানবাহনে আসনের সমান যাত্রী বহন করতে বলে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিতের পর ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে ক্লাস বন্ধের আদেশ আসে। তবে এর মধ্যেও মানুষের জটলা চোখে পড়ছে, এমনকি তৃণমূলে নির্বাচনের জমজমাট প্রচার চলছে। বন্ধ হয়নি বাণিজ্যমেলার মতো আয়োজনও।
যদিও নতুন করে অর্ধেক লোক দিয়ে সরকারি চালানোর নির্দেশ এসেছে, একই নির্দেশ এসেছে আদালত ও ব্যাংকের পক্ষ থেকেও।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবার মৃত্যুর হার কম থাকার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন যে ভ্যারিয়েন্টটা দেখছি ওমিক্রম, সেটা সেরে উঠতে অল্প সময় নিচ্ছে। রিকভারি রেট কিন্তু খুবই ভালো।
‘৮৫ শতাংশের বেশি আক্রান্ত মানুষ ঘরে থেকে ট্রিটমেন্ট নিতে পারছেন এবং তারা সেরে উঠছেন। আমরা অবশ্যই আগামী এক সপ্তাহ পর দেখব এটা (সংক্রমণ) কী পর্যায়ে আছে, সেই অনুযায়ী আমরা পরবর্তী নির্দেশনা দেব।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য সকলেই মাস্ক পরুক। এই সময়টা আমরা অতিক্রম করতে চাই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্য নাগাদ এটি বাড়তে থাকবে। সকলকে সচেতন হতে হবে। আমরা চাই- এই তৃতীয় ঢেউ থেকে যাতে খুব তাড়াতাড়ি উত্তরণ করতে পারি। সে জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে।’
গণপরিবহন সরকারের বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ সবাইকে মানতে হবে। ইউরোপে সংক্রমণের ক্ষেত্রে তাদের পিক সময় পার করেছে। আমাদের একটু পরে শুরু হয়েছে, এ জন্য আমাদের একটু পরে সেটা (চূড়ান্ত সংক্রমণ) হতে পারে।
‘সেক্ষেত্রে আমরা চাইব যাদেরকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, নির্দেশনাগুলো সবাই মেনে চললে তা সকলের জন্যই ভালো। পরিবহন সেক্টরে যারা রয়েছেন তাদেরকেও আমাদের সহযোগিতার করতে হবে। নিয়ম মেনে তারা গণপরিবহন পরিচালনা করবেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা একটা ভালো রেজাল্ট পাব। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ উত্তোরণ করব।’
সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে এর আগে মোবাইল কোর্টের নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষকে অবহিত করে, বলব- আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সকলকে মাস্ক পরে বাইরে আসতে হবে। আমাদের অ্যানাউন্সমেন্টে বলা হবে আপানারা মাস্ক পরেন। একটা ডেট দেয়া হবে যে, আগামীকাল থেকে মোবাইল কোর্ট নামবে। তাই আগে থেকে সতর্ক করে নিয়েই কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
‘মানুষ ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছে যে, এটা (করোনা সংক্রমণ) বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ সচেতন হওয়া শুরু করেছে। তাদের কাছে বার্তা চলে গেছে। আমরা চাই, সবাইকে জানিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তখন বলার একটা যৌক্তিকতা থাকবে যে, আমরা সতর্ক করে দিয়েছিলাম।’