শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে তার আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার দুপুর ২টার দিকে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ দুপুর ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের কাছে ফোন করে ছাত্রীদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘তার বক্তব্য সম্পাদনা (এডিট) করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সবাই আহত হয়েছেন।
‘তিনি এ বিষয়টি অনুধাবন করছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তার নামে ছড়িয়ে পড়া অডিওটিকে ‘বোগাস’ আখ্যায়িত করে উপাচার্যের দাবি, এ ধরনের কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।
শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই অডিও ক্লিপটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
শাবি উপাচার্যের কথিত অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যারা এই ধরনের দাবি (ছাত্রী হলে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢোকার অনুমতি) তুলেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয় সারা রাত খোলা রাখতে হবে, এইটা একটা জঘন্য রকম দাবি। আমরা মুখ দেখাইতে পারতাম না। এখানে আমাদের ছাত্রনেতা বলছে যে, জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে চায় না।
‘কারণ সারা রাত এরা ঘোরাফেরা করে। বাট আমি চাই না যে আমাদের যারা এত ভালো ভালো স্টুডেন্ট, যারা এত সুন্দর, এত সুন্দর ডিপার্টমেন্টগুলো, বিখ্যাত সব শিক্ষক... তারা যাদের গ্র্যাজুয়েট করবে, এ রকম একটা কালিমা লেপুক তাদের মধ্যে।’
শাবি উপাচার্যের এ ধরনের মন্তব্যে তৈরি হয়েছে নতুন ক্ষোভ। এর প্রতিবাদে সরব হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
যে বৈঠকে শাবি উপাচার্য এমন মন্তব্য করেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি কবে হয়েছে তা নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সেটি ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এক বৈঠকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এমন কথা বলেন।তারা জানান, বক্তব্যের সময় উপাচার্য যে ছাত্রনেতার বরাত দিয়েছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন। তিনিও ওই বৈঠকে একই ধরনের মন্তব্য করেন।
সুলতানা ইয়াসমিন নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘এটি উপাচার্যেরই কণ্ঠ। ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সেদিন তিনি এসব কথা বলেছিলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সামনেই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ছাত্রলীগ সভাপতি রুহুল আমিন এসব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।’ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রী হলের সান্ধ্য আইন বাতিলসহ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে তখন আন্দোলন করছিলাম আমরা। এই আন্দোলনের নাম ছিল ‘অর্বাচীন’।‘এটা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের পরপরই। সমাবর্তন হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।”ওমর ফারুক বলেন, ‘ওই আন্দোলনের পর উপাচার্য তার কক্ষে আমাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। বৈঠকে ছয়জন সাধারণ শিক্ষার্থী, ছয়জন ছাত্রলীগ নেতা ও ৩২ জন শিক্ষক ছিলেন। আলোচনার সময় উপাচার্য ও ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে এসব আপত্তিকর কথা বলেন। মেয়েদের রাতে বাইরে থাকা নিয়েও অনেক আপত্তিকর কথা বলেছিলেন তারা।’
ওই বৈঠকের পর ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অনিরুদ্ধ অমিয় নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
স্ট্যাটাসে অনিরুদ্ধ লেখেন, ‘একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যখন অন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিয়ে খুবই অসংগতিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তখন আসলে তার সঙ্গে আলোচনার জায়গাই থাকে না।
‘‘খুব স্পেসিফিক বললে ওনার বক্তব্য এ রকম ছিল- ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না। আমি চাই না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদেরও এই দশা হোক।’ ওনার আরেকটা বক্তব্য এমন ছিল- লাইব্রেরি খোলা রাখার মূল কারণ হচ্ছে, মেয়েদের রাতের বেলা বাইরে রাখা। এমন কথা শোনার পর লিটারেলি থ হয়ে গিয়েছিলাম।”তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটা একদম বোগাস। আমি এ রকম কোনো কথা বলিনি। এগুলো কেউ এডিট করে প্রচার করতে পারে।’