বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনলাইনে দুধ, ঘি, মধু, সরিষার তেল, গুড়ের রমরমা ব্যবসা

  •    
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:৫৩

লাখ টাকার চাকরি হারিয়ে দিশেহারা ছিলেন গোলাম আম্বিয়া আলম। সিরাজগঞ্জ থেকে অনলাইনে দুধ, সরিষার তেল বিক্রির বদৌলতে এখন তিনি ভালো আছেন। তার মতো বহু উদ্যোক্তা অনলাইনে পেজ খুলে বিক্রি করছেন ঘি, মধু, খেজুরের গুড়ও। এই পাঁচ পণ্যের চাহিদা এখন তুঙ্গে। ঘরে বসেই এসব পণ্য পাচ্ছেন ভোক্তারা। ভেজাল আর ঠকানোর অভিযোগও কম পাওয়া যাচ্ছে এখন।

একটি বায়িং হাউজে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি করতেন গোলাম আম্বিয়া আলম, বেতন এক লাখ টাকার বেশি। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবে চাকরি হারান তিনি। কয়েক মাস চলেছেন জমানো টাকায়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন টেকা যাবে না, এই চিন্তা থেকে ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেন।

না, তিনি যে কাজে দক্ষ, সে ব্যবসায় নয়। আলম ঠিক করলেন, তিনি দুধ এবং অগার্নিক নানা জিনিস বিক্রি করবেন। কারণ, এখন এসব নানা পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ ব্যাপক।

তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে, তার এলাকায় দুধের খামারের অভাব নেই। দামও সেখানে কম। ঢাকায় গরুর খাঁটি দুধ নিয়ে আসতে পারলে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লিটার বিক্রি করা যাবে।

কিন্তু আনা যাবে কীভাবে?

খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জীবনটাই পাল্টে গেছে আলমের। জানতে পারেন, অনেক ব্যবসায়ী সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়িতে করে দুধ নিয়ে এসে ঢাকায় বিক্রি করেন।

এই দুধ আনা হয় বিশেষ এক ধরনের গাড়িতে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই চিলিং ভ্যানে দুধ ২৪ ঘণ্টাতেও কিছু হয় না। ঠান্ডা থাকলেও সে দুধ জমে যায় না।

সেই দুধ দোকানে রাখার পদ্ধতিও ভিন্ন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি চিলার মেশিনে সে দুধ রাখা যায় ৭২ ঘণ্টা। এই মেশিনের নিচে থাকে একটি কমপ্রেশার মেশিন, যা দুধকে ঠান্ডা রাখে। চিলারে সেই দুধ আবার ক্রমাগত ঘুরতে থাকে, ফলে দুধ জমে যায় না।

ফ্যাগ্রো-সেফ অ্যান্ড নিউট্রিশাস ফুড থেকে নিয়মিত সরিষার তেল কেনেন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আগে রান্নায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করি। এখন সব কিছুতে ভেজাল। ভেজালমুক্ত তেল পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরি হচ্ছে- ভিডিওতে নিজ চোখে দেখে সেই তেল কিনলাম।

আলম জানান, তারা যে ভ্যানে করে দুধ আনেন, তাতে সাড়ে তিন হাজার লিটার দুধ ধরে। কিন্তু এত দুধ তিনি একা আনেন না। তার লাগে ৬০ থেকে ৭০ লিটার, কোনো কোনো দিন ১০০ লিটারের বেশি। সব মিলিয়ে ৩৬ জন ব্যবসায়ী এই ভ্যানে দুধ আনেন।

আলম প্রতি লিটার দুধের জন্য পরিবহন খরচ দেন ৭ টাকা, আর দুধ পেয়ে যান দোকানে বসেই।

করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা কাটিয়ে পোশাক খাতে আবার সুদিন ফিরলেও আলম আর চাকরির চেষ্টা করেননি। বরং ব্যাপক চাহিদা আছে এমন সব পণ্য দোকানে তুলে আয় বাড়িয়েছেন।

ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, হাতে বানানো গাওয়া ঘি, মধু, ডাল, বাদাম, চালসহ নানা পণ্য বিক্রি করছেন। ঘরে বানানো আচার, নিজেরা ভাঙানো গুঁড়া মশলা, অপ্রচলিত নানা জাতের চালসহ অর্গানিক নানা পণ্য তার আয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আলম জানান, তারা যে ভ্যানে করে দুধ আনেন, তাতে সাড়ে তিন হাজার লিটার দুধ ধরে। কিন্তু এত দুধ তিনি একা আনেন না। তার লাগে ৬০ থেকে ৭০ লিটার, কোনো কোনো দিন ১০০ লিটারের বেশি। সব মিলিয়ে ৩৬ জন ব্যবসায়ী এই ভ্যানে দুধ আনেন। আলম প্রতি লিটার দুধের জন্য পরিবহন খরচ দেন ৭ টাকা, আর দুধ পেয়ে যান দোকানে বসেই।

প্রতি দিন ১০ লিটারের বেশি, ঘি লিটার দুয়ের, গুঁড়া মশলাও বেশ ভালো বিক্রি হয় দোকানটিতে। এর দোকান খরচ মিলিয়ে আগের আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন কর্মচারীও নিয়োগ দিয়েছেন।

দোকানটিতে দুধ রাখা হয় যে চিলার মেশিনে, সেটি আলম বানিয়েছেন পুরান ঢাকা থেকে। খরচ পড়েছে এক লাখ টাকা। এতে দুধ ধরে ১০০ লিটার।

আলম জানান, ১৫০ লিটার, এমনকি ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার চিলার মেশিনও দেখেছেন তিনি।

আলম যে পরিমাণ দুধ আনেন তা দোকান থেকেই বিক্রি করে ফেলতে পারেন দোকান থেকেই। তেমন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করেন না তিনি। তবে আলম জানালেন, অনলাইনে বিক্রি করতে পারলে তার বিক্রি আরও বাড়তো।

দুধের ফেসবুকনির্ভর ব্যবসা করে আবদুল আজিজ। জয়পুরহাট থেকে দুধ এনে বাজারজাত করতে ‘মাশাল্লাহ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন তিনি।

আজিজের দোকান রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায়। পাশাপাশি অনলাইনে অর্ডার দিলে হোম ডেলিভারিও দেন। কেউ চাইলে পাইকারিও দেন।

মিল্কভিটা, আড়ং, প্রাণের মতো কোম্পানি পাস্তুরিত দুধ বিক্রি করে ৭৫ টাকা লিটার দরে। মাশাআল্লাহর মতো পেজগুলো ৭০ থেকে ৯০ টাকা করে লিটার দরে দুধ বিক্রি করে। কেউ পরিমাণে বেশি নিলে দামও কিছুটা কম রাখা হয়।

দুধের পাশাপাশি ইদানিং অনলাইনে তুমুল চাহিদা তৈরি হয়েছে ঘি, ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, মধু, খেঁজুরের গুড় আর গ্রীষ্মে মৌসুমে আমেরও।

এসব পণ্য বিক্রি করতে এখন ফেসবুকে পেজের ছড়াছড়ি। অনেক বেশি বিক্রেতা হওয়ার কারণে পণ্যমূল্যেও এখন ছাড় দেয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।

‘মাশাল্লাহ’ পেজের উদ্যোক্তা আবদুল আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশি ছোট গুরুর দুধ বিক্রি করি আমরা। কোনো প্রকার ভেজাল দিয়ে হারাম খাই না। মধুতে কোনো প্রকার কেমিক্যাল বা ভেজাল দেয়া হয় না। নিজে উপস্থিত থেকেই মধু কালেকশন করি। নিজের লিজ নেয়া চুক্তিভিত্তিক খামারের মধু মানে নিজেদের মধু।’

এই পেজে খুচরা প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ৮০ টাকা করে। তবে একসঙ্গে ১০ লিটার নিলে দাম ৭০ টাকা রাখা হয়। পাইকারি নিতে চাইলে সর্বনিম্ন ২০ লিটার অর্ডার করতে হয়। তখন দামটা আলোচনা করে ঠিক করা হয়।

এই পেজে ঘিও বিক্রি করা হয়, সেটি নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন করা হয়। দাম রাখা হয় প্রতি কেজি এক হাজার ২০০ টাকা দরে।

‘মাশাল্লাহ’ পেজের উদ্যোক্তা আবদুল আজিজ নিউজবাংলাকে জানান, এই পেজে খুচরা প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করা হয় ৮০ টাকা করে। তবে একসঙ্গে ১০ লিটার নিলে দাম ৭০ টাকা রাখা হয়। পাইকারি নিতে চাইলে সর্বনিম্ন ২০ লিটার অর্ডার করতে হয়। তখন দামটা আলোচনা করে ঠিক করা হয়।

সিরাজগঞ্জের নিজস্ব খামার থেকে সংগ্রহ করে পূর্ণ ননিযুক্ত খাঁটি দুধ সেক্রেড মিল্ক বিক্রি করছে ‘সাক্রে ডেইরি’ পেজ। এখানেও প্রতি লিটার তরল দুধ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট, দোকান, বিয়ে বা যেকোনো প্রয়োজনে পাইকারি মূল্যেও দুধ বিক্রি হয়।

‘রাজশাহীর আম’ নামের ফেসবুকে পেজে গ্রীষ্মে আম বিক্রি হলেও এই মৌসুমে বিক্রি বিক্রি করা হচ্ছে খেজুরের গুড়। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই গুড় তৈরি করা হয়।

ঢাকা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী এই পেজের উদ্যোক্তা।

পেজটিতে বড় ২ কেজির পাটালি গুড় প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, আর ছোট পাটালি প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ‘বিজ’ নামে এক ধরনের গুড় বিক্রি করা হয় ৩৫০ টাকা কেজি দরে।

‘বণিক বাজার’ নামে ফেসবুকে পেজ খুলে যশোরের খেজুরের গুড় বিক্রি করেন জহির ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেকে বুঝতে পারে না কোন গুড়টা আসল, আর কোনটা নকল। আমরা গাছ থেকে রস সংগ্রহের শুরু থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত পুরো পক্রিয়াটি আমরা সামনে দাঁড়িয়ে করে থাকি। আর সে কারণেই আমরা আপনাদের শতভাগ ভালোর নিশ্চয়তা দিতে পারি। স্বাস্থ্য এবং সুনামের কথাটি মাথায় রেখে সকল প্রকার খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে থাকি।’

বণিক বাজারে প্রতি কেজি খেজুরের পাটালি ও ঝোলা গুড় ২৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

‘ফ্যাগ্রো-সেফ অ্যান্ড নিউট্রিশাস ফুড’ থেকে নিয়মিত সরিষার তেল কেনেন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আগে রান্নায় সয়াবিন তেল ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করি। এখন সব কিছুতে ভেজাল। ভেজালমুক্ত তেল পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরি হচ্ছে- ভিডিওতে নিজ চোখে দেখে সেই তেল কিনলাম।’

এখানে পাঁচ লিটার সরিষার তেল ১ হাজার ৩৩৯ টাকায় বিক্রি হয়। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট রয়েছে। তিন লিটারে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে। তিন লিটারের দাম পড়ে ৮৫০ টাকা।

দাম একটু বেশি কেন মেসেঞ্জারে জানতে চাইলে ফ্যাগ্রো-সেফ অ্যান্ড নিউট্রিশাস জানান, ‘৫ কেজি সরিষা থেকে প্রায় আড়াই কেজি তেল তৈরি হয়। পরিশ্রম বেশি। কিন্তু খাঁটি তেলের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

একই পেজে ২০০ গ্রাম ঘি ৪৫০ টাকা, ৪০০ গ্রাম ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেকোনো একটি কিনলে ১০ শতাংশ, দুইটি কিনলে ২০ শতাংশ, তিনটি বা ১ হাজার টাকার ওপর কিনতে ২৫ শতাংশ, চারটি বা ২ হাজার টাকার ওপর কিনলে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা রয়েছে।

নিয়মিত অনলাইন থেকে এসব পণ্য কেনেন রেহানা পারভীন। তিনি বলেন, ‘করোনার পর থেকে বাইরে যাওয়া প্রায় বন্ধ। ওই সময় বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে কেনার অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ভালো জিনিস পেয়েছি। কোনো পেজ থেকে প্রথম অর্ডার করলে ক্যাশ অন ডেলিভারি দিতাম। এখন অনেক পেজ পরিচিত হওয়ায় আগেও পেমেন্ট করি। এতে সময়ও বাঁচে, ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্য পাই।’

এ বিভাগের আরো খবর