শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের বাসভবনে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নিন্দা জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার রাতে বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধানের জন্য যখন আলোচনা চলছে সেই অবস্থায় এ রকম কার্যক্রম অন্য কিছুর ইঙ্গিত বহন করে বলে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। আন্দোলনের নামে তারা এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডকে কোনো অবস্থায় সমর্থন করতে পারেন না।
এ ধরনের কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে তার বাসভবনের জরুরি পরিষেবাগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেন। শিক্ষার্থীরা জানান, পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এভাবেই উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখা হবে।
রাতে শিক্ষার্থীরা জরুরি পরিষেবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় উপাচার্যের বাসভবনে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করা হয় বলে শাবির কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের এক শীর্ষ নেতা সোমবার সকালে নিউজবাংলাকে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, উপাচার্যের বাসার জেনারেটরে তেলের মজুত পর্যাপ্ত নয়। যা আছে তা দিয়ে আজকের দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে সমস্যায় পড়তে হবে। তা ছাড়া আন্দোলনকারীরা বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতেও দিচ্ছে না। ফলে তেল শেষ হলে বাইরে থেকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
প্রেক্ষাপট
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন নামেন।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।
এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।
২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।