বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষিজমিতে ইটভাটা, পুড়ছে কাঠ

  •    
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:৫৫

মাদারীপুর জেলা কৃষি সস্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে অতি উর্বর এক ফসলি জমি ১০ হাজার ৬৭৯ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৪৯ হাজার ৭২৬ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২০ হাজার ১২৪ হেক্টর ও চার ফসলি ২৫০ হেক্টর।

মাদারীপুরে বেশ কিছু ইটভাটায় কয়লার বদলে ইট তৈরিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঠের চাহিদা পূরণে এলাকায় নিধন হচ্ছে ছোট-বড় সব গাছ। এ ছাড়া নিয়ম না মেনেই বসতবাড়ির পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে ভাটা, এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ।

অবৈধভাবে গড়ে তোলা এমন অনেক ভাটায় কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলি জমি। এসবের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হলেও থামছে না অনিয়ম।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না ইটভাটার মালিকরা। কয়েকটি ইটভাটায় জ্বলছে কাঠ। এত কাঠ ব্যবহার করার কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ। আর কৃষিজমি থেকে মাটি সংগ্রহ চলছে অবাধে।

তাদের অভিযোগ, বিষয়গুলো নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন নীরব ভূমিকায় রয়েছে।

মাদারীপুরে ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ছবি: নিউজবাংলা

মাদারীপুর জেলা কৃষি সস্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে অতি উর্বর এক ফসলি জমি ১০ হাজার ৬৭৯ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৪৯ হাজার ৭২৬ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২০ হাজার ১২৪ হেক্টর ও চার ফসলি ২৫০ হেক্টর।

মাদারীপুর কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘কৃষি ও কৃষিজমি নষ্টের অন্যতম কারণ ইটভাটা। এ ছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ফসলি জমি নষ্ট হয়- এমন স্থানে যেন ইটভাটার লাইসেন্স দেয়া না হয়।’

মাদারীপুর জেলায় বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলেও সেখান থেকে কোনো হালনাগাদ তথ্য দেয়া হয়নি।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, মাদারীপুর জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশই অবৈধ। ইটভাটার বেশির ভাগই স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে। অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর ৮(১)(ঘ) ধারায় বলা আছে, কৃষিজমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই আইনের ৩(ক) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো ইটভাটা করা যাবে না।

‘মাদারীপুরে অবশ্য এসব আইনের কোনো তোয়াক্কা নেই, যেখানে-সেখানে ফসলি জমি এমনকি বসতবাড়ি ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ভাটা। এসব করে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ লঙ্ঘন করছেন ভাটার মালিকরা।’

ইট তৈরিতে ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে মালিকদের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, সস্প্রতি স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা জোর করে তাদের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়েছেন।

কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে ইটভাটা মালিক হেমায়েত কাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন।

তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।

মাদারীপুর ইটভাটা শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ ভাটাতেই এখন আর কাঠ পোড়ানো হয় না। তবে হেমায়েত কাজীর ভাটা, রহিম খানের ভাটাসহ ৭-৮টি ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয় বলে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি।

‘বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়, কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। কয়েক দিন আগে তিনটি ভাটায় জরিমানা করলেও আগের মতোই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকেও কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ভাটাগুলোতে।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘কোনো কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা করা যাবে না। আইনগতভাবে এটা নিষিদ্ধ। কোনো ভাটায় গাছ পোড়ানোর নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কয়েকটি ভাটায় পানি দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। আগামীতে আরও শক্ত হাতে কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর