কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ১৭টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
রোববার সকাল থেকে সারা দিন অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন।
তিনি জানান, অভিযানে এমএইচটি ইটভাটাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আরএমবিকে ২ লাখ ৫০ হাজার, এমআরআই ইটভাটাকে ২ লাখ ৫০ হাজার, মানিক ব্রিকসকে ২ লাখ, এমএইচ ব্রিকসকে ১ লাখ, মা ব্রিকসকে ১ লাখ, এএমবি ব্রিকসকে ৪ লাখ, বিবিএফ ব্রিকসকে ২ লাখ, এমবিএফ ব্রিকসকে ৪ লাখ, বিবিএফ ব্রিকসকে ৪ লাখ, ফোর স্টারকে দেড় লাখ, এএমবি ব্রিকসকে ২ লাখ, কেঅ্যান্ডবিকে ৩ লাখ, এমআরএম ব্রিকসকে ৩ লাখ, এমএসএস ব্রিকসকে ৩ লাখ টাকা, এসআরবিকে ২ লাখ ৬০ হাজার এবং একতারা ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় বিবিএফ নামের ইটভাটার চুলার আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে।
অভিযানের সময় সরেজমিন দেখা যায়, অধিকাংশ ভাটা মালিক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কিছু ইটভাটায় জ্বালানি কাঠের স্তূপ এক দিন আগে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অনেক ভাটায় অভিযান পরিচালনাকারীদের জন্য বসার চেয়ার এনে পরিষ্কার করে রাখা হয়। আর অধিকাংশ জরিমানার টাকা প্রস্তুত ছিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা টাকা বের করে দেন।
অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অফিসের কর্মকর্তা, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অংশ নেন।
কুষ্টিয়ার পরিবেশবাদী খলিলুর রহমান মজু জানান, এভাবে অভিযান চালিয়ে প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। অভিযান শেষে ভাটাগুলো আবার কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করতে থাকবে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সঠিকভাবে অভিযান চালিয়ে ভাটাগুলোকে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আনা সম্ভব।
কুষ্টিয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা সভাপতি মতিউর রহমান লালটু জানান, সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় অ্যাসোসিয়েশন করে ইটভাটা পরিবেশবান্ধব উপায়ে ইট পোড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারে। এতে কৃষিজমি রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকবে। ভাটা মালিকরাও লাভ করতে পারবেন।
কুষ্টিয়া পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বিপ্লব জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে প্রত্যেকটি ভাটা থেকে অ্যাসোসিয়েশনের নামে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে তোলা হয়েছে। যেসব ভাটা এসব টাকা দেয়নি সেখানেই পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী এসব ভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। ভাটাগুলো অবৈধ জায়গায় স্থাপিত এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘এভাবে অভিযান চালিয়ে একসময় ভাটাগুলোকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আনতে পারব বলে আশা করি। অধিকাংশ ভাটা মালিকেরই উচ্চ আদালতে রিট করা আছে। সে কারণে আদালতের নির্দেশনার বাইরে আমরা যেতে পারছি না।’
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতাউর রহমান জানান, কুষ্টিয়া জেলায় ১৬১টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। অন্য সব ইটভাটা মালিক দীর্ঘদিন ধরে আইন লঙ্ঘন করে দিনের পর দিন ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। অনেকে আবার হাইকোর্টে রিট করে স্থগিতাদেশ এনে ইটভাটা পরিচালনা করছেন।
অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একটি অভিযান পরিচালনা করতে গেলে প্রশাসনের অনেকগুলো উইং সংযুক্ত করতে হয়। এ কারণে যেকোনো জায়গা থেকে ভাটা মালিকদের কাছে আগে তথ্য ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।
ভাটা মালিকদের পক্ষ থেকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।