সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করতো চক্রটি। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলতেন তারা।
সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা তদন্ত করতে নেমে এই প্রতারণা চক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হলেন- হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি, অন্যতম সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু।
অভিযানে ভিকটিমের ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল উদ্ধারসহ জব্দ করা হয় প্রতারণার কজে ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ও একাধিক ব্যাংকের কার্ড।
রোববার বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন ওই নারী। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে গত রাত থেকে শুরু করে আজ দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
এরা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। গ্রেপ্তার ইশতিয়াক এই চক্রের হোতা, গ্রেপ্তার আরজে নিরা ও গ্রেপ্তার সাদমান আফিফ ওরফে রিশু তার অন্যতম সহযোগি।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে জিম্মি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্নজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের হেনস্থা ও ব্ল্যাকমেইল করত। তাদের ভাড়া বাসা ব্যবহার করে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো। এছাড়া অনলাইনেও ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলত তারা। গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদেরকে সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিম ট্রান্সজেন্ডার নারীর সঙ্গে গ্রেপ্তার সাদমান আফিফ রিশুর পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে রিশুর সঙ্গে ভিকটিমের সাক্ষাত হয়। এরপর সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নেয়ার পরে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোর করে ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানী ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। এসময় তারা ট্রান্সজেন্ডার ওই নারীর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং এক লাখ টাকা দাবি করে।
র্যাব জানায়, ওই নারীকে ব্লাকমেইলের এক পর্যায়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ভয়-ভীতি দেখায়। ওই ট্রান্সজেন্ডার নারীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ইশতিয়াক এর আগের দুটি মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় সে কারাভোগ করেছে। তারা এর আগেও এমন প্রতারণা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।