বিমা খাতে উত্থানের পরও নতুন বছরে ১৬ কর্মদিবসে তৃতীয় দিনের মতো সূচকের পতন হয়েছে। এর মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পতন দেখল দুই দিন।
আগের সপ্তাহের পাঁচটি কর্মদিবসের প্রতিদিন সূচক অল্প অল্প করে বাড়ার সুখস্মৃতি নিয়ে নতুন সপ্তাহের রোববার প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতেই সূচক বাড়ে ২৮ পয়েন্ট। তবে ৫ মিনিট পর থেকেই সূচক পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৩২ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
সূচক পতনের দিনে ১০২টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ২৪৮টির। আগের দিনের দামেই লেনদেন শেষ করেছে ২৮টি কোম্পানি।
চলতি বছর প্রথমবারের মতো সূচক কমে গত ৯ জানুয়ারি, ৫৫ পয়েন্ট। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো সূচক কমে ১২ জানুয়ারি। সেদিন পতন হয় ৫৩ পয়েন্ট। বাকি প্রতিদিনই সূচক বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১৬ দিনে সূচকে যোগ হয়েছে ৩১৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
সূচক পতনের দিন কমেছে লেনদেনও। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৪৮২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬০১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১২১ কোটি টাকা।
তবে গত ১৪ কর্মদিবস ধরে টানা ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার পর এ বিষয়টি নিষ্ক্রিয়দের আবার শেয়ার কেনায় আগ্রহী হয়ে ওঠার প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এদিন প্রায় সব খাতেই দরপতন হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম ছিল সাধারণ বিমা খাত। এই খাতের ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেনি একটিরও। ৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল অপরিবর্তিত।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এর বাইরে ব্যাংক, আর্থিক, বস্ত্র, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়নের মতো প্রধান খাতগুলোয় কমেছে সিংগভাগ শেয়ারের দর।
যেসব কোম্পানির দর কমায় সূচকের পতন
রোববার সূচক পতনের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের কারণে। শেয়ারদর ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৯ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট।
সূচক যত পড়েছে, তার চেয়ে বেশি কমিয়েছে এই ১০টি কোম্পানি
টেলিযোগাযোগ খাতে রবির দর কমেছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সূচক থেকে হারিয়ে ৮ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট।
লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের শেয়ারদর ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৫ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।
এ ছাড়া স্কয়ারফার্মা ৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট, পদ্মা অয়েল ৩ দশমিক ১৭ পয়েন্ট, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক ২ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট ও এসিআই লিমিটেডের কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক ফেলেছে ৪৪ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।
এর বিপরীতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির শেয়ারদর ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়ার পর সূচকে যোগ হয়েছে ২০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোন সূচক বাড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। শেয়ারদর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, রেনিটা, বিকন ফার্মা, লিনডে বিডি, বেক্সিমকো ফার্মা, সোনালী পেপার, বার্জার পেইন্টস ও ইউনিলিভার কনজ্যুমার সূচকে বেশ কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে।
সার্বিকভাবে সূচকের পতন হলেও এই ১০টি কোম্পানি বেশ ভালো পয়েন্ট যোগ করেছে
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৪৬ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
দর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। ১৭ জানুয়ারি লেনদেনে আসা ১০ টাকা অভিতিহ মূল্যেই প্রতিটি শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়ে ১৭ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছেছে।
এর পরই ছিল মালিকানা বদল হতে যাওয়া ফু ওয়াং ফুডসের। মিনোরি বাংলাদেশ এই কোম্পানিটির মালিকানায় আসতে অনুমোদন দেয়ার খবরে শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এ ছাড়া এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও এপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ারদর ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
পঞ্চম অবস্থানে ছিল বিডি ল্যাম্পস, যার দর ২২১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা ৫০ পয়সা।
রোববার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই ছয়টি খাতে
এ ছাড়া ইয়াকিন পলিমারের দর ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ফু ওয়াং সিরামিকসের দর ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের দর ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও আরএকে সিরামিকসের দর ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির সেরা দশের শেষ অবস্থানে ছিল বিমা খাতের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, যার দর ৪৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ২০ পয়সা।
দরপতনের শীর্ষ ১০
এই তালিকার শীর্ষে ছিল মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। জেড ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এদিন ৬ শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে আরও দুটি কোম্পানির। এর মধ্যে গ্লোবাল হ্যাভি কেমিক্যালসের দর ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর কমেছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
লভ্যাংশ ঘোষণার পর উড়তে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন দর হারিয়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ দর হারিয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
তিন বছর পর লভ্যাংশ ঘোষণা করা তাল্লু স্পিনিং প্রতি বছরই লোকসান দেখানো ও লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর দুই দিনেই দর হারিয়েছে ৪০ শতাংশের মতো। ১৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১০ টাকা ১০ পয়সায়। এর মধ্যে আজ কমেছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৬০ পয়সা।
মিথুন নিটিংয়ের শেয়ারদর ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে হয়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা।
এ ছাড়া শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, কেয়া কসমেটিকসের দর ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে।
লেনদেনে সেরা ১০
দর হারালেও লেনদেনে সেরা ছিল রোববার বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ৯৭ লাখ ৪২ হাজার ৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
বিমা ছাড়া প্রধান সব খাতেই দরপতন দেখেছে বিনিয়োগকারীরা
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে ৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা, পাওয়ার গ্রিডের ৫৬ কোটি ৭ লাখ টাকা, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে ৩৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এপেক্স ফুটওয়্যারে ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার ১০ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৫টি শেয়ার, সোনালী পেপারে ৩৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮১টি শেয়ার, সাইফ পাওয়ারটেকের ৩৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
এ ছাড়া ফরচুন সুজে ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোয় ৩২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, লিন্ডে বিডিতে ২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।