দুচোখ যেদিকে যায় চোখে পড়ে সরিষা ফুলের মনজুড়ানো দৃশ্য। কাঁচা হলুদের সেই ছন্দে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। মাঠজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে দোল খাচ্ছে উত্তরের জেলা নীলফামারীর কৃষকের স্বপ্ন।
স্বল্প সময়ে চাষ সম্ভব বলে চাষিরা সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরিষা চাষে সার বা সেচও লাগে না খুব একটা, তাই স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে চাষ।
জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, সরিষা তাদের জন্য এক ধরনের বোনাস ফসল। বীজ বপনের পর থেকে সর্বোচ্চ ৭০-৮৫ দিনের মধ্যেই সরিষা ঘরে তোলা যায়। অল্প পরিমাণ ইউরিয়া ও টিএসপি ছাড়া অন্য কোনো সারেরও প্রয়োজন হয় না। চারা গজানোর পর ক্ষেত্র বিশেষে আগাছা পরিষ্কার ছাড়া তেমন কোনো পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। তাই সরিষা চাষে বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়।
প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ, যার বাজার মূল্য ১২ হাজার টাকার বেশি। সে বিবেচনা করে কৃষকের লাভ থাকে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালিপাড়ার কৃষক সফিউদ্দিন জানান, এক বিঘা জমিতে খরচ হয় আড়াই হাজার পর্যন্ত। আর সাত থেকে আট মণ সরিষা উৎপাদন হয়। ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ১২ হাজার টাকারও উপরে।
স্বল্প সময় ও খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ছবি: নিউজবাংলা
একই এলাকার আরেক কৃষক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমন ও বোরো চাষের মাঝখানে সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ধানের ফলনও বেশি হয়। এ ছাড়া সরিষার গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চফলনশীল (উফশি) বারি-১৪, বারি-৯, সরিষা-১৫, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-৪ ও স্থানীয় টরি-৭ চাষ করছেন। ফলন ভালো হলে আর দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষ আরও বাড়বে।
সরিষার জমিতে ধানের চাষও ভালো হয় এবং বোরো চাষে খরচ কমে আসে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা গাছও বেড়ে উঠেছে দ্রুত। যার কারণে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
‘কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়ায় সরিষা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।’