বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে বেতন বৃদ্ধি: নির্বাহীরা ক্ষুব্ধ, চাকরিপ্রার্থীরা খুশি

  •    
  • ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩০

ব্যাংকাররা বললেন, এটি পালন করা হলে ব্যাংক খাতে তৈরি হবে অস্থিরতা। চাকরিপ্রার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির জন্য দরখাস্ত করলে বেতন বলা হয় ২০ হাজার টাকা। এই বেতন লজ্জাজনক।

ব্যাংকে ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। হঠাৎ করে নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ব্যাংকের অফিস সহায়কদেরও (সাপোর্ট স্টাফ) বেতন ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংক নির্বাহীদের প্রশ্ন, ‘কলমের এক খোঁচায়’ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। তবে ন্যূনতম বেতন নিয়ে খুশি চাকরিপ্রার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে তিনটি পদে ন্যূনতম বেতন ঠিক করে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে বলা হয়, অফিস সহায়কদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ২৪ হাজার টাকা, শিক্ষানবিশ অবস্থায় ন্যূনতম বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা এবং চাকরি স্থায়ী হলে বেতন দিতে হবে ৩৯ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এতে করে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেতনবৈষম্য কমবে।’

এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। বলেন, এটি পরিপালন হলে ব্যাংক খাতে তৈরি হবে অস্থিরতা।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘ব্যাংক খাতে ঝাড়ু দিলেই ২৪ হাজার টাকা দিতে হবে, যেখানে গার্মেন্ট খাতে ঝাড়ু দিলে ৮ হাজার টাকা। অন্য খাতের সঙ্গে এত পার্থক্য কেন? এ ধরনের নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জারি করার অধিকার রাখে না।’

এ ব্যাপারে এখনই মন্তব্য দেয়নি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সংগঠনের সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সময়ের ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি পর্যালোচনা করছি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরবর্তী মতামত জানাব। এ জন্য কয়েক দিন সময় লাগবে।’

চাকরিপ্রার্থী অনেকেই বেতন বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির জন্য দরখাস্ত করলে বেতন বলা হয় ২০ হাজার টাকা। এই বেতন লজ্জাজনক।

ছুটির দিন থাকায় বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

চাকরিপ্রার্থীরা খুশি

২০২০ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন শহীদ হাসান। সবশেষ ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে শহীদ বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করার পর ব্যাংকের চাকরির ভাইভাতে অফার করা হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে নিজে কত বেতন প্রত্যাশা করি কর্তৃপক্ষ সেটা জানতে চায়।’

শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা তরিকুল ইসলাম জানান, ‘বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি নিতে গেলে সামান্য বেতন বলে। চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে তখন অপমানিত মনে হয়।’

খোরশেদ আলম এই সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। বলেন, ‘ন্যূনতম বেতন-ভাতা না দিলে এই বাজারে টিকে থাকা কঠিন।’

শ্রাবন্তী চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম বেতন কাঠামো ঠিক করে দেবার ফলে আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই পথে পা বাড়াতে আগ্রহ আরও বাড়বে।’

ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে নতুন বেতন বাস্তবায়নে তাগিদ দেন জসিম সর্দার। বলেন, ‘নানা অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হয়, যা এই নির্দেশনার পর বন্ধ হবে।’

দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যাংকের আরও প্রশিক্ষণের তাগিদ জানিয়ে সুমি আক্তার জানান, ‘এ পর্যন্ত চারটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। যদি চাকরি হয়, তবে নতুন কাঠামোতে বেতন হবে। বেতন বেশি হলে দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এক প্রকার তাড়না তৈরি হবে।’

টিকতে পারবে না ব্যাংক

বেতন বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংকে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করছেন ব্যাংকাররা। বেসরকারি খাতের অন্যতম বড় ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একটি ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের পর্ষদ সরকারের ন্যূনতম বেতন কাঠামো মেনে তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করবে। হঠাৎ করেই বেতন চাপিয়ে দিলে অন্য খাতের কী হবে?’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের ওপর এটা কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটা নিয়ে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এককভাবে এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক চাপিয়ে দিতে পারে না।

‘গার্মেন্ট খাতে বেতন বাড়ানোর জন্য কত দর-কষাকষি করতে হয়েছে। আর এখানে একটা কলমের খোঁচা দিয়েই সব ব্যাংক খাতের বেতন ১০-২০ হাজার বাড়িয়ে দেবে এটা হতে পারে না। নৈতিকভাবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’

অর্থনীতির এই বিশ্লেষক মনে করেন, সরকারি ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এটা করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি খাতের ব্যাংকে এ ধরনের হস্তক্ষেপের অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে কি না সেটা আইনানুগ দিক থেকে দেখতে হবে। এটা আইনবহির্ভূত।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমর্চারীরা কাজ না করলে তাদের ছাঁটাইও করা যাবে না। এ ধরনের নির্দেশনা ক্ষমতাবহির্ভূত। ভালো কর্মীর মূল্যায়ন কমে যাবে। কারণ যিনি কাজ কম করবেন বা করবেন না, তাকেসহ সবাইকে প্রমোশন দিতে হবে, বেতন বাড়াতে হবে। এটা কোন আইনে হয়? এটা বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকে শৃঙ্খলা থাকবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক এমডি এবং চেয়ারম্যান পর্যায়ে কর্মকর্তাদের বেতনের পার্থক্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ হয়। ওপরের কর্মকর্তাকে গাড়ি-বাড়িসহ নানা সুবিধা দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বেতনবৈষম্য কমবে। সব ব্যাংকই প্রতি বছর অনেক লাভ করে। ব্যাংক অন্যদিকে ব্যয় কমাবে। যেসব ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে না, তারা সময় নেবে। একেবারেই বাস্তবায়নযোগ্য নয় এটি বলা যাবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর