উপাচার্য ইস্যুতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার গভীর রাতে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত আড়াইটার দিকে। তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবির বিষয়ে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
ঢাকা থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারে আবারও অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আশ্বস্ত করেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব জানান শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের সদস্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনশন নিয়ে চিন্তিত শিক্ষামন্ত্রী। তাই তিনি অনুরোধ করেছেন এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা যেন সরে আসেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী অ্যাকাডেমিক বা আইনি হয়রানির শিকার যেন না হয় সেই বিষয়টি দেখা হবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।’
তবে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
অন্যদিকে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে সকালে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার রাতে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি নিজে সিলেটে যেতে পারছেন না।
প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানিয়েছিলেন, আমরা আলোচনায় প্রস্তুত। আজ রাতে যদি সম্ভব হয়, যদি এই মুহূর্তেও সম্ভব হয়, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। হয় তারা প্রতিনিধি দল পাঠাক অথবা অনলাইনে হোক, আমরা দ্রুত আলোচনা চাই। এই স্বৈরাচারি ভিসির পদত্যাগ চাই।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রীর পক্ষে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী।
পরে রাত ১টা ২২ মিনিটের দিকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে অংশ নেন ১০ জন। তাদের মধ্যে দুই জন অনশনকারী। তারা হলেন, কাজল দাস ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
প্রেক্ষাপট
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন নামেন।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার দুপুরে কাফন পরে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় দেন গণ-অনশনের ঘোষণা।