অনশন ভেঙে আলোচনায় বসতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি আবার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। জবাবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা এখনই আলোচনায় বসতে চান। তবে আলোচনার পাশাপাশি চলবে অনশনও। শনিবার নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে, তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি নিজে সিলেটে যেতে পারছেন না বলে জানান মন্ত্রী।
আলোচনার আহ্বান প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় প্রস্তুত। আজ রাতে যদি সম্ভব হয়, যদি এই মুহূর্তেও সম্ভব হয়, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। হয় তারা প্রতিনিধিদল পাঠাক অথবা অনলাইনে হোক, আমরা দ্রুত আলোচনা চাই। এই স্বৈরাচারী ভিসির পদত্যাগ চাই।’তিনি বলেন, ‘অনশনকারীদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবু তারা অনশন ভাঙছেন না। তারা সংকল্পবদ্ধ, ভিসি পদত্যাগ না করলে অনশন চলবে।’
রাজ বলেন, ‘অলরেডি তিন দিন হয়ে গেছে। আমরা জানি না, কাল তাদের কী অবস্থা হবে। ওদের সংকল্পটা এত দৃঢ় যে, আমরাও তাদের ফিরিয়ে আনতে পারছি না। তাদের এই অবস্থা আমরা আর নিতে পারছি না।’
আলোচনার পাশাপাশি অনশনও চলবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনশন চলছে, চলবে। দরকার হলে সবাই অনশনে নেমে পড়ব। উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে।’
- আরও পড়ুন: শাবিতে এবার গণ-অনশনের ঘোষণা
শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে যোগ দেন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়।
তিন মিনিটের তথ্যচিত্রে পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি ছোড়া, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের দৃশ্যগুলো দেখানো হয়।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
- আরও পড়ুন: শাবি উপাচার্য ফরিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন নামেন।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার দুপুরে কাফন পরে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় গণ-অনশনের ঘোষণা দেন।