স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শনিবার দুপুরে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যান ব্যাংক কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ। তাদের টিকা সনদ দেখতে চায়নি কেউ, আর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তারা সনদ ছাড়াই বের হয়েছেন।
চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেইটের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে শনিবার দুপুরে দেখা যায় এ চিত্র।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক প্রশ্ন করলে ফাহিম বলেন, ‘টিকা দিয়েছি, তবে কার্ড আনতে ভুলে গেছি। আর রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তো কার্ড দেখতে চাচ্ছে না।’
চট্রগ্রাম নগরীতে প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টেই অভিন্ন চিত্র। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিধিনিষেধ জারি করলেও তা মানছেন খুব কম সংখ্যাক মানুষ।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে বিশেষ করে ওমিক্রন সতর্কতায় রেস্টুরেন্টগুলোতে টিকার সনদ দেখে খাবার পরিবেশন করার কথা বলা হয়েছে। তা যেমন মানা হচ্ছে না, তেমনি মাস্ক ছাড়াই সর্বত্র ঘুরছেন মানুষ। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখছে, তবে ভেতরে মাস্ক ছাড়াই আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককেই।
চট্টগ্রামের একাধিক রেস্টুরেন্ট মালিক, স্টাফ ও আগতদের সঙ্গে কথা বলেন নিউজবাংলা। প্রায় সবার বক্তব্য দায়সারা।
কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার পরিবেশন করছি। তবে টিকা কার্ডের বিষয়ে খুব একটা কড়াকড়ি করছি না। করোনার কারণে দুই বছরে অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাই কিছুটা ছাড় দিয়ে চলতে হচ্ছে।’
গণপরিবহনগুলোতে মানা হচ্ছে না করোনার বিধিনিষেধ। ছবি: নিউজবাংলা
গণপরিবহনগুলোতেও বিধিনিষেধ শিকেয় উঠেছে। শনিবার বিকেলে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে দেখা যায় জনা পঞ্চাশেক মানুষের জটলা। তারা সবাই বাসের অপেক্ষায়।
বহদ্দারহাটমুখী ১০ নম্বর রুটের একটি বাস আসতেই তাতে হুড়মুড় করে উঠলেন অধিকাংশ। যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে ছিল না মাস্ক; কয়েকজনের ঝুলছিল থুতনিতে। এভাবে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে চলছে বেশিরভাগ বাস। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না তারা।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মেহেদী রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ে বাসচালক, সহকারী ও যাত্রীদের সতর্ক হতে হবে। তাদেরই যেন মাথাব্যথা নেই। সচেতনতার জন্য মাস্ক বিলিসহ প্রচার চলছে। এভাবে চললে নির্দেশ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে।’
চট্রগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই। শনিবার বিকেলে নগরীর কর্ণফুলী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজি-মাছ বিক্রেতাদের কারো মুখেই নেই মাস্ক। তবে অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা গেছে।
জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা খোকন মিয়া বলেন, ‘মাস্ক পরতে অস্বস্তি লাগে। টিকা নিছি, তাই মাস্ক খুব একটা পরিনা।’
মাঠ পর্যায়ে বিধি অমান্যের প্রতিযোগিতার মধ্যেই চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি যাচ্ছে খারাপের দিকে। নগরীতে গত ১০ দিনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০৪ জন শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
বিএসএমএমইউ ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘বিধিনিষেধ কাগজের টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এসব প্রয়োগ ও নজরদারির জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। গণপরিবহণ বা রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের শতকরা ৩৫ ভাগও টিকা নিতে পারেননি। সবমিলিয়ে বিধিনিষিধগুলো বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠছে না।’
চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনতে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত রেস্টুরেন্ট, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টারসহ জনসমাগম হয় এমন জায়গায় নিয়মিত অভিযান চালাবে। জনগণকে সচেতন করতে প্রচার চালাব।’