‘মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদের উপহার দেন থানা নির্বাহী অফিসার। প্রথমবার পেয়েছিলাম দেড় শ টাকার জাকাতের লুঙ্গী, এরপর নারীদের জন্য দিয়েছিল চাদর। এগুলো পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?’
কণ্ঠে ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ১৯৭১ সালে ২ নম্বর সেক্টর থেকে যুদ্ধ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম খান।
শনিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর ৬ নম্বর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ৭১’-এর উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ সভায় কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করে থানা নির্বাহী অফিসার, ওর বয়স তো আমার ছেলের চেয়েও ছোট। কেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা মর্যাদা পাব না?’
‘অনেকেই বলে জয় বাংলা আওয়ামী লীগের স্লোগান। কিন্তু এটা তাদের না, এই স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের, মুক্তিযোদ্ধাদের।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সাধারণ সভার প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন একাত্তরে বিভিন্ন সেক্টর থেকে যুদ্ধ করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ বছরই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী ভাবধারার সাম্প্রদায়িক শক্তি। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ ও মূল্যবোধ নষ্ট হয়েছিল। বর্তমানে সেই আদর্শ ফিরে আসতে শুরু করলেও এখনও নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তির অবসান হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সমাজে মুক্তিযোদ্ধারা এখনও প্রাপ্য মর্যাদা পাননি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ‘স্বাধীনতাবিরোধী’দের কবর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘সংসদের সামনে যদি কবর থাকে, তবে সেটা সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর থাকার কথা। কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের কবর থাকার কথা। কিন্তু কোনো রাজাকারের কবর থাকবে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কবরগুলো ওই এলাকা থেকে সরানোর জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধারাই সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়াব।’
নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের দর্শন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র প্রদান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।